Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Home

দেশের কিংবদন্তীশিল্পী ফকির আলোমগীর চলে গেলেন না ফেরার দেশে

 ডালিম কুমার দাস টিটু ঃ  দেশের কিংবদন্তী গণসংগীতশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর চলে গেলেন না ফেরার দেশে । করোনার কাছে হেরে গেলেন  এই কিংবদন্তী শিল্পী । শুক্রবার (জুলাই ২২)  রাত ১০ টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে   তিনি মারা যান । মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানান এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন দেশের সর্বস্তরের জনগন  । একটু পেছনে ফিরলেই বলা যায় , ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১       ফেব্রুয়ারীতে   ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মাে. হাছেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। শিল্পী কালামৃধা গােবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতকপাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে সংগীতচর্চা করেছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি বাঁশীবাদক হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পীগােষ্ঠী ও গণশিল্পীগােষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এবং ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। গণ-অভ্যুথান, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০-এর সামরিক শাসনবিরােধী গণ-আন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তাঁর গান দিয়ে।যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে সঞ্চিত যন্ত্রণাকে প্রকাশ করার জন্যই দেশজ সংগীতের সঙ্গে পাশ্চাত্য সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে তিনি ও তার সময়ের কয়েকজন শিল্পী শুরু করেছিলেন প্রথম বাংলা পপ ধারার গান। বাংলা পপ গানের বিকাশেও তাঁর রয়েছে বিশেষ অবদান।দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার গাওয়া ‘সান্তাহার জংশনেদেখা’, ‘বনমালী তুমি’ ‘কালাে কালাে মানুষেরদেশে’, মায়ের একধার দুধের দাম’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’সহ বেশ কিছু গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যেও সখিনা’ গানটি এখনাে মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৮২ সালের বিটিভির ‘আনন্দমেলা’ অনুষ্ঠানে গানটিপ্রচারের পর দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগােষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি, জনসংযােগ সমিতির সদস্যসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয়পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার,‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযােগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলােশিপ’। হয়তো আর আসবেননা ফকির আলোমগীর কিন্তু তার গানের মাধ্যমে তিনি বেঁচে থাকবেন কোটি প্রাণের মাঝে।

Related Articles

how do you feel about this website ?

Back to top button
%d bloggers like this: