নবজাতকের যত্ন ও পরিচর্যা ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস ।

নবজাতকের যত্ন

শিশু জন্মের পর থেকে ২৮দিন পর্যন্ত সময়কালকে নবজাতক বলা হয় ৷ এই সময় মা এবং  শিশু উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ 

 

নবজাতকের সুস্থতায়  পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই ৷ শিশুর নাজুক কোমল শরীর  খুব সহজেই বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে ৷ এছাড়াও কাঁচা নাভির মাধ্যমে সামান্য অপরিচ্ছন্নতায় ইনফেকশনও হয়ে যেতে পারে ৷     

আপনার ছোট্ট বাবুর ছোট্ট শরীরকে অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে রাখতে চাইলে তার শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। 

জন্মের এক ঘণ্টা শিশুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কে বলে  ‘গোল্ডেন ওয়ান আওয়ার’। শিশুর জম্মের পরে প্রথম ও একমাত্র কাজ হলো মায়ের দুধ (শালদুধ) খাওয়ানো। শালদুধ শিশুর জন্য প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। এবং শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।

শালদুধ পরিমাণে কম হলেও শিশুর জন্য যথেষ্ট ও পরিপূর্ণ পুষ্টি জোগায়। শালদুধ খাওয়ালে শিশুর রাতকানা, জন্ডিস ও অন্যান্য রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। শালদুধ খাওয়ালে মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ থাকে।

মনে রাখবেন ,জন্মের সময় শিশু তার ত্বকে একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা-প্রাচীর নিয়ে জন্মায় ৷ এটা হলো এমিওনিটিক ফ্লুইড ৷ এর ওপর ভারনিক্স ক্যাসোসা নামে আরেকটি লেয়ার থাকে ৷ এই পাতলা সাদাটে আবরনটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ৷ছয়-সাতদিনের মধ্যে এটি আপনা আপনি পরিষ্কার হয়ে যায় ৷ কিন্তু ভুলেও ঘষে মেজে এটি তুলতে যাবেন না ৷

 

শিশুর যত্নে করণীয়  ১০ টি টিপস; 

 

১- শিশুর নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে হলে যা যা করতে হবে ; 

 

জন্মের সাথে সাথে শিশুকে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে মুছতে হবে।

আরেকটি পরিষ্কার শুকনো কাপড়ে মাথা ও শরীর জড়িয়ে রাখতে হবে।

দেরি না করে নবজাতককে মায়ের বুকে দিতে হবে। মায়ের শরীরের উষ্ণতা নবজাতকের জন্য প্রয়োজন।

জন্মের ৩ দিনের মধ্যে কোনোভাবেই শিশুকে গোসল করানো যাবে না ।

 

২- নবজাতকের  নাভির যত্ন ;

নাভি শুকনো, পরিষ্কার ও খোলামেলা রাখতে হবে ।

নাভিতে কোনো কিছু লাগানো যাবে না ।

যদি সংক্রমণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত সেবাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে ।

লক্ষ্য রাখতে হবে যে নাভিতে কোনো সংক্রমণ আছে কি-না। যেমন- নাভির গোড়ার চারদিকে লাল যা পেটের চামড়া পর্যন্ত বিস্তৃত, নাভি থেকে ঘন পুঁজ, দেরিতে নাভি পড়া ইত্যাদি। সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যে নাভি পড়ে যায় ।

 

৩- শিশুর জন্ডিস থেকে সুরক্ষা ; 

 

অধিকাংশ নবজাতক বিশেষ করে অপরিণত শিশুদের যকৃত অপরিণত থাকে বলে পিত্তরসে যথেষ্ট বিলিরুবিন নিঃসরণ করতে পারে না। ফলে বিলিরুবিন রক্তে চলে আসে এবং শিশুর জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়। এই জন্ডিসকে শরীরবৃত্তীয় জন্ডিস বলে। জন্মের ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে বিশেষ করে মাথা ও মুখ হলুদ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শিশুর সমস্ত শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে শরীরের রং স্বাভাবিক হয়ে আসে। জন্ডিস যেন মারাত্বক আকার ধারণ না করে সেজন্য –

 

শিশুকে প্রতিদিন খালি গায়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রোদে রাখতে হবে (এ সময় শিশুর চোখ ও মাথা ঢেকে দিতে হবে।

শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ দিতে হবে।

তবে যদি জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশু জন্ডিসে আক্রান্ত হয় এবং জন্ডিসের সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন- দুর্বলতা, নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, বুকের দুধ না খাওয়া ইত্যাদি থাকে তবে জরুরি ভিত্তিতে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

 

৪- শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি ; 

  • মাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আরাম করে বসে অথবা শুয়ে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বসা অবস্থায় পিঠ সোজা রাখতে হবে ।
  • শিশু যেন মায়ের গায়ের সাথে লেগে থাকে ।
  • শিশুর মাথা ও শরীর যেন সোজা থাকে ।
  • স্তনের সাথে শিশুর সঠিক সংযোজন থাকে। 
  • শিশু মায়ের স্তনের দিকে সম্পূর্ণ ফেরানো ও শিশুর নাক স্তনের বোঁটার বিপরীত দিকে থাকবে ।
  • শিশুর পুরো শরীর আগলে রাখতে হবে ।

 

৫-  হাত ধুয়ে নেওয়া ;

শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে নিজের হাতটি সবসময় ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন ৷ ব্যবহার করতে পারেন জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ অথবা ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

শিশুকে কেউ কোলে নেবার আগে তার হাত ধুয়ে নিতে বলুন ৷ এছাড়া শিশুকে পরিষ্কার করার আগে নিজের হাতটি ধুয়ে তবেই স্পর্শ করুন শিশুকে ৷

 

৬- নবজাতকের  সঠিক সময়ে নখ কাটা ; 

বাচ্চাদের নখ খুব দ্রুত বাড়ে ৷ ওর নখের আঘাতে ওর ত্বকে লাগতে পারে আঁচড় ৷ আঁচড় গভীর হলে ঘা হবার সম্ভাবনা থাকে ৷ শিশু ঘুমিয়ে গেলে নখ  কাটুন তাহলে নড়াচড়ার বা কেটে যাবার ভয় থাকবে না ৷ আর জেগে থাকা অবস্থায় কাটতে চাইলে কারো সাহায্য নিন ৷তবে খুব বেশি চেপে ধরবেন না ৷ সাধারণ বেবি নেইলকাটার বা কাঁচির মত বেবি নেইলকাটার যেটাই ব্যবহার করুন না কেন ব্যবহারের আগে তা জীবাণুনাশক মেশানো পানিতে একবার ধুয়ে নিন ৷  বাচ্চাদের নখ সাধারণত নরমই থাকে তবে শক্ত মনে হলে গোসলের পর নখ কাটুন৷

 

 ৭- শিশুকে গোসল করানো সঠিক সময়;

প্রথমবার শিশুর গোসল দেয়াটা অন্য এক অভিজ্ঞতা ৷ এত ছোট একটা শরীর যাকে ঠিকমত ধরাই মুশকিল ভাবছেন তাকে গোসল দেবেন কিভাবে?

নাভি না শুকানো পর্যন্ত ডাক্তাররা সাধারণত শিশুর গোসল দিতে বারণ করে থাকেন ৷ ততদিন পর্যন্ত আপনি বরং শিশুর গা মুছে দিন ৷ 

 

৮- নবজাতকের থাকার ঘর যেমন হওয়া উচিত ;  

শিশুর ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখতে চেষ্টা করুন। ঘরের তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখুন। জানালা খুলে রাখুন। ঘরে যাতে যথেষ্ট  আলো বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে ফ্যান ছেড়ে দিন। অতিরিক্ত কাপড়-চোপড় ও কাঁথা বা চাদরের প্রয়োজন নেই। বিশেষত, মাথা ঢেকে রাখবেন না, কারণ ছোট্ট শিশুদের তাপ মাথা থেকেই বেশি নির্গত হয় । জ্বর ছাড়ার জন্য তাপ নির্গত হওয়াটা জরুরি।  

৯- নবজাতকের ঘুমের যত্ন ; 

নবজাতকদের প্রথম 2 মাসে প্রায় 16 ঘন্টা করে ঘুমাতে হবে। তারা সাধারণত 2 থেকে 4 ঘন্টা ধরে ছোট ছোট করে ঘুম নেয় এবং তারা ক্ষুধার্ত হলে বা ভিজিয়ে ফেললে জেগে ওঠে। শিশুকে প্রতি 3 ঘণ্টায় যেহেতু খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়, তাই আপনাকে তাকে জাগিয়ে তুলে খাওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। সে নবজাতকদের আদর্শ ঘুমের প্যাটার্ন অনুসরণ না করলে চিন্তা করবেন না। প্রতিটি শিশু আলাদা এবং তার একটি ভিন্ন ঘুমচক্র আছে। ঘুমের সময় আপনার বাচ্চার মাথার অবস্থানটি পালটে দিতে ভুলবেন না। এটি মাথার উপর চ্যাপ্টা দাগ গঠনে বাধা দেয়। শিশুর যাতে দমবন্ধ না হয়ে যায়, তাই ঘুম পাড়ানোর সময় তাকে অবশ্যই চিত করিয়ে শোয়াবেন। মা যেন শিশুর সাথে সাথে ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

 

১০- নবজাতকের পোষাক এবং ডায়াপার ; 

শিশুদের প্রজনন অংগ বা জেনিটাল অনেক বেশি নরম কোমল থাকে ৷ শিশুকে পোষাক পরানোর সময় এবং ডায়াপার বাছতে গিয়ে খেয়াল রাখুন তা আরামদায়ক এবং উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন কি না ৷

ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর জেনিটাল এর যত্ন ও পরিচ্ছন্নতায় পার্থক্য রয়েছে ৷

মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে তার যোনিপথের বাইরে ফোলা ফোলা ভাব ও লালচে থাকা স্বাভাবিক ৷ ভেজা নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করুন ৷সামান্য বেবি সোপ ব্যবহার করুন ৷ মুছুন সামনে থেকে পেছনে( front to back)৷ প্রতিবার ডায়াপার পাল্টানোর পর বা পায়খানার পর এভাবে মুছে সামান্য বেবি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন ৷ 

ছেলে শিশুর জননাঙ্গের ব্যাপারেও যত্নশীল হোন ৷ পেনিসের মাথায় চামড়ার নিচে ময়লা জমে যায় ৷ পরিষ্কার করুন ৷ ভেজা নরম কাপড়ে সামান্য বেবি সোপ লাগিয়ে মুছে নিয়ে পেট্রোলিয়াম জেলি বা বেবি অয়েল লাগিয়ে নিন ৷ তাহলে ডায়াপার বা কাপড়ের ঘষায় ব্যথা পাবে না ৷ এছাড়া আপনি ওয়াইপস (wipes) ব্যবহার করতে পারেন ৷

 

প্রসবের পরে নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ঘন ঘন ডায়পার পরিবর্তন করা। ডায়াপার পরানোর আগে যদি ঐ জায়গাতে বেবি অয়েল মাখিয়ে নেন তাহলে ডায়াপারের ঘষা থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে ৷ অনেকে ডায়াপার পরাবার আগে পাউডার ব্যবহার করেন ৷ কিন্তু পাউডার ব্যবহারে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ৷

 

আরও পড়ুন –   গর্ভবতী ভাতার আবেদন ২০২৩

how do you feel about this website ?

%d bloggers like this: