নোয়াখালী কেন বিখ্যাত? নোয়াখালী জেলার অবস্থান । নোয়াখালী জেলার নামকরণ কিভাবে? নোয়াখালী জেলার প্রতিষ্ঠাকাল কখন ? নোয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিং, নোয়াখালী জেলার ইতিহাস,নোয়াখালী জেলার আয়তন কত? নোয়াখালী জেলার জনসংখ্যা কত? নোয়াখালী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ কারা ? নোয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান কি কি ? নোয়াখালীর শিক্ষার হার কত ? নোয়াখালী জেলার জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য ও প্রশ্ন এবং উত্তর …
নোয়াখালী জেলার অবস্থান –
নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। জেলার পূর্বে চট্টগ্রাম জেলা ও ফেনী জেলা , উত্তরে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর জেলা ও ভোলা জেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার ইতিহাস কি ?
ফেনী , নোয়াখালী , লক্ষ্মীপুর জেলা নিয়ে একটি বৃহত্তর অঞ্চল ছিল , যা বৃহত্তর নোয়াখালী নামে পরিচিত ।
১৭৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এদেশে প্রথম আধুনিক জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রচেষ্টা নেন। তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯টি জেলায় বিভক্ত করে প্রতিটি জেলায় একজন করে কালেক্টর নিয়োগ করেন। এই ১৯টি জেলার একটি ছিল কলিন্দা।
কলিন্দা জেলা গঠিত হয়েছিল মূলত: নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে।
১৭৮৭ সালে পুনরায় জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং এবার সমগ্র বাংলাদেশকে ১৪টি জেলায় ভাগ করা হয়। এই ১৪টির মধ্যেও ভুলুয়া নামে নোয়াখালী অঞ্চলে একটি জেলা ছিল। পরে ১৭৯২ সালে ত্রিপুরা নামে একটি নতুন জেলা সৃষ্টি করে ভুলুয়াকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তৎকালে শাহবাজপুর, হাতিয়া, নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ত্রিপুরার কিছু অংশ, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাই নিয়ে ছিল ভুলুয়া পরগনা।
১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এ অঞ্চল ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬৮ সালে ভুলুয়া জেলাকে নোয়াখালী জেলা নামকরণ করা হয়।
বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পূর্ব নাম কি ছিল?
– বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পুর্ব নাম ছিল ভুলুয়া
নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় কবে ?
-১৮৬৮ সালে ভুলুয়া জেলাকে নোয়াখালী জেলা নামকরণ করা হয়। নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৮ সালে ।
নোয়াখালী নামকরণ কিভাবে হয়েছে ?
ইতিহাসবিদদের মতে একবার ত্রিপুরার পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা পানির প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল নতুন খালকে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় নোয়া (নতুন) খাল বলা হত।
এই নোয়া খাল থকে লোক মুখে পরিবর্তিত হয়ে নোয়াখালী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে ।
নোয়াখালী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
– আতিথেয়তা জন্য নোয়াখালী অঞ্চল বিখ্যাত । এছাড়া নোয়াখালীর অঞ্চলিক ভাষা , মহিষের দুধের দই , পিঠা , নিঝুম দ্বীপ , ভাষা , সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত ।
নোয়াখালী জেলা কোন বিভাগে ? নোয়াখালী চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত ।
নোয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিং কী ?নোয়াখালী জেলার ব্র্যান্ডিং “নিঝুম দ্বীপ” । এর সঙ্গে আরো রয়েছে জেলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের দই, সংস্কৃতি, স্থান ও গুণী ব্যক্তিত্ব ।
নোয়াখালী জেলার আয়তন কত? মোট আয়তন ৪,২০২.৭০ বর্গকিমি (১,৬২২.৬৭ বর্গমাইল)
আরো পড়ুন – লক্ষ্মীপুর জেলার জানা অজানা তথ্য ও বিভিন্ন প্রশ্নের [?] উত্তর c l i c k
নোয়াখালী জেলার মোট জনসংখ্যা কত ?
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নোয়াখালী জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৩,৭০,২৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৬,১০,৪৪৪ জন এবং মহিলা ১৭,৫৯,৮০৭ জন।
নোয়াখালী জেলার মোট শিক্ষার হার কত ? -নোয়াখালী জেলার মোট সাক্ষরতার হার ৬৯.৫০%।
নোয়াখালী জেলায় থানা কয়টি রয়েছে ? -নোয়াখালী জেলা ১০টি থানা রয়েছে ।
নোয়াখালী জেলায় মোট উপজেলা কয়টি ? -নোয়াখালী জেলা ৯টি উপজেলা রয়েছে ।
নোয়াখালী জেলায় গ্রাম কয়টি ? -মোট ৮৮২টি মৌজা, ৯৬৭টি গ্রাম ।
নোয়াখালী জেলায় পৌরসভা কয়টি? -৮ টি পৌরসভা।
নোয়াখালী জেলায় ইউনিয়ন কয়টি ? -৯৩টি ইউনিয়ন।
নোয়াখালী জেলায় সংসদীয় আসন কয়টি ? -নোয়াখালী ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
নোয়াখালী পোস্ট কোড কত ? নোয়াখালীর পোস্ট কোড ৩৮০০।
প্রশাসনিক বিভাগের কোড কি ? নোয়াখালী জেলার প্রশাসনিক বিভাগের কোড ২০ ৭৫ ।
নোয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ কি কি ?
নোয়াখালী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ নিন্মে –
১. দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা পার্ক, হাতিয়া। ২. কমলার দিঘী, হাতিয়া। ৩. গাজী এয়াকুব আলী (রঃ) মাজার শরীফ এবং নলুয়া মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ, সেনবাগ। ৪. কল্যান্দি জমিদার বাড়ি ।
৫. কমলা রাণীর দীঘি। ৬. কল্যান্দী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির । ৭. গান্ধি আশ্রম। ৮. নিঝুম দ্বীপ এবং নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান, হাতিয়া। ৯. নোয়াখালী জিলা স্কুল , নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ, নোয়াখালী পাবলিক লাইব্রেরী, মাইজদী। ১০. পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, নোয়াখালী।
১১. ফকির ছাড়ু মিজি (রহ.) সাহেবের দরগাহ, মাইজদী। ১২. বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, সোনাইমুড়ি। ১৩. মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর। ১৪. ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, চর বাটা।
১৫. স্বর্ণ দ্বীপ, হাতিয়া। ১৬. মুছাপুর ক্লোজার, চেয়ারম্যান-ঘাট, হাতিয়া । ১৭. ঠাকুর রামচন্দ্র দেবের সমাধি আশ্রম, চৌমুহনী। ১৮. সোনাইমুড়ী বড় মসজিদ। ১৯. গোয়ালখালী বিচ,মোহাম্মদপুর, সুবর্ণচর। ২০. ড্রীম হলিডে পার্ক, সোনাপুর।
২১. চৌমুহনী পৌর পার্ক, আলীপুর, চৌরাস্তা। ২২. চৌমুহনী পৌর মহাশ্মশান, চৌরাস্তা। ২৩. প্রতাপপুর রাজবাড়ী, সেনবাগ। ২৪. কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, চৌমুহনী।
আরও পড়ুন – লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহ
নোয়াখালী জেলায় বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ কারা ?
নোয়াখালী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি –
> মোহাম্মদ রুহুল আমিন – বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
> আবুল কালাম আজাদ – বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
> জহুরুল হক – আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম শহীদ।
> মুনীর চৌধুরী – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
> মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
> মোহাম্মদ আবুল বাশার – বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
> হবিবুর রহমান – মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী।
> হেম-প্রভা মজুমদার – ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব।
> মোহাম্মদ শরীফ – বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
> আমিনুল হক (অ্যাটর্নি জেনারেল) – প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল।
> আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক – প্রাক্তন সেনাপ্রধান।
> শহীদুল্লা কায়সার – শহীদ বুদ্ধিজীবী।
> জহির রায়হান – চলচ্চিত্র পরিচালক ।
> রফিক উল্লাহ চৌধুরী – বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব।
> ওয়ায়েদ উল্লাহ – মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ।
> শাহাদাত হোসেন চৌধুরী – অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ।
> ওবায়দুল কাদের – সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ।
> শিরীন শারমিন চৌধুরী – দেশের প্রথম নারী স্পিকার।
> এ এস এম শাহজাহান – প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা।
> আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল – একুশে পদক প্রাপ্ত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব এবং কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা।
> বদরুল হায়দার চৌধুরী – আইনবিদ এবং প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি।
> সা’দত হুসেন – বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা।
> আবদুল হাকিম – মধ্যযুগীয় কবি।
> আবদুশ শাকুর – একুশে পদক প্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং গোলাপ বিশেষজ্ঞ ।
> এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী – স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত চিকিৎসক ।
> কবীর চৌধুরী – শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক এবং অনুবাদক ।
> চিত্তরঞ্জন সাহা – খ্যাতনামা প্রকাশক এবং বাংলা একাডেমী বই মেলার উদ্যোক্তা ।
> ফারাহ মাহবুব – বিচারপতি ।
> মঈন উদ্দিন আহমেদ – প্রাক্তন সেনাপ্রধান ।
> আনিসুল হক – , সাবেক ঢাকা মেয়র ।
> মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী – চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নাট্য নির্মাতা।
> আবদুল মালেক উকিল – আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ।
> নুরুল হক – জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলার সাবেক গভর্নর।
> এ টি এম শামসুজ্জামান – অভিনেতা ।
> প্রণব ভট্ট – গীতিকার এবং ঔপন্যাসিক।
> ফেরদৌসি মজুমদার – টিভি অভিনেত্রী।
> মওদুদ আহমেদ – রাজনীতিবিদ।
> মামুনুর রশীদ কিরন – রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী।
> মালেক আফসারী – চলচ্চিত্র পরিচালক।
> মাহফুজ উল্লাহ – লেখক, সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং পরিবেশ-বিদ।
> শবনম বুবলি – চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ।
> এম এ হাসেম – (পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা)
> আবুল খায়ের – (আবুল খায়ের গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা)
নোয়াখালীর শহর এর ইতিহাস –
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী নামে পরিচিত। নোয়াখালী বাংলাদেশের একমাত্র জেলা যার নিজ নামে কোন শহর নেই।
১৯৪৮ সালে যখন উপজেলা সদর দফতর মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, তখন তা ৮ কিলোমিটার উত্তরে সরিয়ে ১৯৫০ সালে জেলার সদর দপ্তর অস্থায়ীভাবে মাইজদীতে স্থানান্তর করা হয়।
ব্রিটিশদের পরিকল্পনায় নতুন করে এ শহরের পত্তন হয়।
নোয়াখালীর বর্তমান জেলা প্রশাসকের নাম কি?
-নোয়াখালীর বর্তমান জেলা প্রশাসকের নাম , মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান ।
নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার কে?
-মোঃ শহীদুল ইসলাম ( পিপিএম )
ঢাকা থেকে নোয়াখালী এর দুরুত্ব কত ? -রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৭১ কিলোমিটার ।
চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী এর দুরুত্ব কত ? -চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার।
তথ্য সূত্র:
২০০১ এবং ২০১১ সালের আদমশুমারী প্রতিবেদন।