পদ্মা সেতুর a to z জানা অজানা তথ্য ও বিভিন্ন প্রশ্ন – উত্তর (!)

padma bridge details bangla

“সেই এতোটুকু বয়স থেকে শুনতাম… পদ্মা সেতু হইলে… তারপর আব্বা, চাচা বা গ্রামের কতজন যে তুমুল আফসোসের স্বরে বলে যেতেন পদ্মা সেতু হলে কী কী হতে পারতো!!
ছোটবেলায় বহুবার বাপ-চাচাদের আবেগ-তাড়িত কণ্ঠে বলতে শুনেছি, ‘আরেহ, আমাগো বাড়ি কি ঢাকারতন দূরে নি? পদ্মা বিরিজ হইলে বেইন্না বেলা বাড়িরতন গিয়া ঢাকায় অফিস কইরা আবার দিনে দিনে বাড়ি ফেরন যাইবো “ -কথাগুলো বলেছেন মাদারীপুরের একজন।

চোখের সামনে যখন দেখছিলাম নানা ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূলতা, একপর্যায়ে যখন ভাবতে বাধ্য হলাম, নাহ! আর হবেনা আমাদের স্বপ্নের সেতু। তখনই বলতে গেলে শেখ হাসিনার একক হিম্মত, সাহস, আর একরোখা মনোভাবে কাজ এগিয়ে চললো। তবুও দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটেনি। ঝিনুক দিয়ে সমুদ্র সেঁচার মতো অসাধ্য সাধন মনে হচ্ছিল কাজটি। বারবার মনে হচ্ছিল সত্যি কি হবে আমাদের পদ্মা সেতু! সেই সেতু আজ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত হলো।

পদ্মা সেতুর সর্বশেষ আপডেট , পদ্মা সেতুর বিশ্ব রেকর্ড , পদ্মা সেতু নিয়ে উক্তি , পদ্মা সেতুর সুবিধা , পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান সহ  পদ্মা সেতুর a to z

 

পদ্মা সেতুর সূচনাঃ পদ্মা সেতু নির্মাণের সূত্রপাত হয় ২০০৭ সালের ২৮ শে আগস্ট।

তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তখন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা ।

তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতু কাজ শুরু করতে পারে নাই। পরবর্তী কালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে পদ্মা সেতুর পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন এবং পদ্মা সেতুর সাথে রেলপথ সংযুক্ত করেন এর ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি পায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ।

এর কিছুদিন পর পদ্মা সেতুর সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। এবং অবশেষে দুর্নীতির কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এর ফলে বিশ্ব ব্যাংক এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার আর্থিক সহযোগিতা করতে পিছিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে তৈরি করা হবে।

যা ছিল একটি দুঃসাধ্য এবং প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে পদ্মা সেতু তৈরির কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে এবং সেতু নির্মাণের কাজ ২০১৩ সালে শেষ হবে এবং এর যাবতীয় সকল কাজ ও জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সময় ২০১৫ সাল। কিন্তু বিভিন্ন বাধাবিপত্তির কারণে সঠিক সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারেনি।

তারপরে  নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। এবং নির্মাণের যাবতীয় সকল কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে।  আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জের সাথে শরিয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে প্রচলিত গুজব :
জুলাই ২০১৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে বলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়ায়। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারী ধারণা করে অনেক মানসিক ভারসাম্যহীনকে মারধরে পুলিশে হস্তান্তর করার ঘটনা ঘটে। “রেনু” নামে একজন কে পিটিয়ে মেরে-ফেলা হয় । পরে এ ঘটনাকে গুজব ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে ৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এক্ষেত্রে গবেষকরা সেতু কর্তৃপক্ষকে সেতুটি নির্মাণে খুঁটিনাটি সকল তথ্য জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন।

 

 

পদ্মা সেতুর অফিসিয়াল নাম কী?
২৯ মে ২০২২ তারিখে সেতু বিভাগের উন্নয়ন অধিশাখার এক প্রজ্ঞাপনে “পদ্মা সেতু”( Padma Bridge) নামটি চূড়ান্ত করা হয়। এতে বলা হয়, সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’র আওতায় মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরা প্রান্ত সংযোগকারী পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি সরকার ‘পদ্মা সেতু’ নামে নামকরণ করলো।

পদ্মা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কী?
– চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ

কত তারিখে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়?
– ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ইং

পদ্মা সেতু র দৈর্ঘ্য কত ও প্রস্থ কত?
–  সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়াল-পথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মি (৫৯.৪ ফুট)

পদ্মা সেতুর বাজেট ২০২২ / পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় কত ?
– সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু কবে চালু হবে ?
– ২৫ জুন ২০২২ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন ।

 

পদ্মা সেতুর টোল কত?

– ২৮ এপ্রিল ২০২২ পদ্মা সেতুর জন্য টোলের হার প্রস্তাব করে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠায় সেতু মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদনের পর তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়।
১৭ মে ২০২২ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেল ১০০ টাকা,
কার ও জিপ ৭৫০,
পিক-আপ এক হাজার ২০০ ও মাইক্রোবাসকে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে।
বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার, বড় বাসকে (থ্রি-এক্সেল) প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।

এছাড়া ছোট ট্রাককে (৫ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ( ৮ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।

 

পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু ?
– পদ্মা সেতু বিশ্বের ১২২ তম সেতু ।

 

বিশ্বের কততম দীর্ঘ  পদ্মা সেতু  ?
– বিশ্বের এগারতম দীর্ঘ পদ্মা সেতু । বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডের রেকর্ডসে নাম রয়েছে চীনের ড্যানইয়াং কুনসান গ্র্যান্ড ব্রিজের। ১শ’ ৬৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার এক বছর পর ২০১১ সালে এর রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়।

পদ্মা সেতুর বিশ্ব রেকর্ড:

১) এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

২) এর পরের বিশ্বরেকর্ড হলো পিলার এবং স্প্যানের মধ্যে যে বিয়ারিং থাকে সেটি। এখানে ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে কোনো সেতুতে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি।

৩) সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেন ব্যবহার করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পদ্মা সেতু। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম কোনো সেতু তৈরিতে এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির বাদাম দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

৪) পদ্মা সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল উভয়ই ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ সেতুগুলো হয় কংক্রিটে নির্মিত, নাহয় স্টিলের।

৫) অন্য রেকর্ডটি হলো নদী-শাসন সংক্রান্ত। ১৪ কিলোমিটার (১.৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২.৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদী-শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী-শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতু প্রকল্প তিন জেলায় বিস্তৃত। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীপুরের শিবচর। ভাঙনসহ নানা কারণে পদ্মা সেতু যাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্যই নদী-শাসন করা হচ্ছে। আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর স্থান কোথায়?
– মুন্সিগঞ্জের মাওয়া এবং শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে।

পদ্মা সেতুর মোট পিলার সংখ্যা কতটি? – ৪২ টি।

একটি পিলার থেকে অন্য একটি পিলারের দূরত্ব কত? / প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য কত? – ১৫০ মিটার

পদ্মা সেতুর মোট স্প্যান সংখ্যা কতটি? – ৪১ টি।

কত তারিখে এবং কত নং পিলারে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়?
– ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নং পিলারের উপর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। ঐদিন পদ্মা সেতু প্রথম দৃশ্যমান হয়।

কত তারিখে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়?
– ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর, ১২ ও ১৩ নং পিলারের উপর পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়। ঐদিন সম্পূর্ণ সেতুর কাঠামো প্রথম দৃশ্যমান হয়।

পদ্মা সেতুর জন্য প্রয়োজনীয় এবং অধিগ্রহণ-কৃত মোট জমির পরিমাণ কত? – প্রায় ৯১৮ হেক্টর।

পদ্মা সেতু নিচ দিয়ে নৌ-যান চলাচলের জন্য কতটুকু ফাঁকা রাখা হয়েছে? – ১৮ মিটার(৬০ ফুট)

পদ্মা সেতুতে সড়ক পথ কত লেনের? – ৪ লেনের।

পদ্মা সেতুতে মোট কতটি পাইল আছে?
– ২৮৬ টি । এর মধ্যে ২৬২ টি স্টিল ও ২৪ টি কংক্রিটের। প্রতিটি পাইলের পরিধি ৩ মিটার। এগুলো ১১৪-১২০ মিটার মাটির নিচে আছে।

কবে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে পদ্মা সেতুর ঋণের চুক্তি এবং কখন তা বাতিল করে?
– ২৮ এপ্রিল ২০১১ ইং ঋণের চুক্তি হয় (১২০ কোটি ডলারের) এবং ৩০ জুন ২০১২ ইং চুক্তি বাতিল হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক কে? মোঃ শফিকুল ইসলাম

পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজে কোন ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে?- তিয়ান-ই

পদ্মা সেতুর নকশা করেন কে ?
– AECOM এর নকশায় হবার কথা ছিলো । পরবর্তীতে ” বুয়েট” এবং COWI ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে হয়।

 

পদ্মা সেতু ঢাকার সাথে কতটি জেলার সংযোগ স্থাপন করবে?
– দক্ষিণাঞ্চলের ২৯ টি জেলার ।

কাউই(COWI) কী?
-ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ( পদ্মা সেতুর পাইল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে থাকে )।

কারা পদ্মা সেতু প্রকল্পটি তত্ত্বাবধানের কাজ করছে?
– বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন(কেইসি-KEC)

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুই পাড়ে কত কিলোমিটার নদী শাসন হয়েছে?
– ১২ কি. মি.। নদী-শাসনে চুক্তি হয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে। নদী-শাসনে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে ১০টি বাক্য / পদ্মা সেতু নিয়ে উক্তি:

১) ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।

২) ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের উপরে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখনও এলার্ট হও, চেঞ্জ দ্য ডিজাইন এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে।’

 

৩) ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু-মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি এবং স্বচ্ছতার সামান্যতম ঘাটতিও ছিল না।

৪) ২০২২সালের ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। সেতুতে যে স্প্যানগুলো বসাচ্ছে, এগুলো তার কাছে ছিল জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। ছড়লে ভেঙে পড়বে। আবার তার সঙ্গে কিছু দোসরেরাও…তাদেরকে এখন কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত।’

 

৫)২০২২ সালের ২১ মে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংক তাদের সহযোগিতার হাত ফিরিয়ে নিয়েছিল। তারা চলে গেলেও আমরা আমাদের টাকা দিয়েই পদ্মা সেতু করেছি। জুন মাসেই চন্দ্রালোকিত পূর্ণিমা রাতে পদ্মা সেতুতে দাঁড়িয়ে বাংলার মানুষ পূর্ণিমার চাঁদ দেখবে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, তরুণ প্রজন্মের মেট্রো-রেল তো হয়েই গেল। ফখরুল সাহেব এবার কী বলবেন?

৬) গত ২৩ মে ২০২২ তারিখে মির্জা ফখরুল বলেছেন, “আজকে শেখ হাসিনা- তিনি পদ্মা সেতু করার বড়াই করছেন। আমরা বলতে চাই, পদ্মা সেতু আপনার একার না, আওয়ামী লীগের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। জনগণের পকেটের টাকা থেকে যে ট্যাক্স কেটে নিয়েছেন, সেই জনগণের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে।”

৭) বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াতের সময় জনগণ সেতুতে আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটের কথা স্মরণ করবে।

৮ ) মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে পদ্মা সেতু।

৯) পদ্মা সেতু- বাংলাদেশের স্বপ্ন, সাহস ও সক্ষমতার গল্প ।

১০) পদ্মা সেতু: বাংলাদেশের অহংকারের প্রতীক।

১১) দেখিয়ে দিয়েছি আমরা পারি, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না । শেখ হাসিনা।

 

 

পদ্মা সেতু তৈরি হলে কি কি অর্থনৈতিক সুবিধা হবে?

– বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ বা কমপক্ষে তিনকোটি মানুষ সরাসরি এই সেতুর মাধ্যমে উপকৃত হবে।এতে বলা হয়, এই সেতুর মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে, পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচন হবে এবং উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি গতি ত্বরান্বিত হবে। দেশের ওই অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব গড়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমবে।
এই সেতু চালু হলে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে, যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানী ও আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে।

এডিবি’র মতে, এই সেতুর ফলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং আঞ্চলিক জিডিপি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

ভারতের ‘ইকোনমিক টাইমস’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এই সেতুটি (পদ্মা সেতু) বাংলাদেশের জন্য গৌরবের এবং অর্থনীতির জন্য যুগান্তকারী ঘটনা। যা ২০২১ সালের মধ্যে দেশটিকে ‘মধ্যম আয়ের’ দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।

 

 

how do you feel about this website ?

%d bloggers like this: