বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়! একটু ভাবুন বিশ্ববিদ্যালয়টি কার নামে! তারপর ভাবুন বিশ্ববিদ্যালয়টি কোন জেলায়। এরপর ভাবুন দশ বছর যাবৎ কারা ক্ষমতায়। মানে জাতির পিতার নামে, উনার নিজ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত আর উনারই সুযোগ্য কন্যা শুধু ক্ষমতায় না বরং দেশের পুরো ক্ষমতা উনার হাতের মুঠোয়। তাই এটা আশা করা খুবই স্বাভাবিক যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের প্রতি আর তার অবস্থানের প্রতি সুবিচার করতে হলে এটা হওয়া উচিত দেশের সবচেয়ে ভালো দুর্নীতিমুক্ত উদাহরণীয় একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়। এটা আশা করা খুবই স্বাভাবিক যে, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ যেই ধরণের কথা শুনা যায় সেই ধরণের কিছু করার সাহস অন্তত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো কক্ষনো হবে না। কিন্তু গত কিছুদিন যাবৎ যা শুনছি তাতে মনে হচ্ছে এর প্রশাসন “বঙ্গবন্ধু” এবং “গোপালগঞ্জ” এই দুইয়ের প্রতি কোন প্রকার সম্মানতো দেখাচ্ছেই না উল্টো যত অন্যায় করা যায় তা করে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে নিশ্চই সবাই জেনে গেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্কাস আলী এবং তৎসংশ্লিষ্ট ভিসির গল্প।
আক্কাস আলী মাস্টার্স ছাড়াই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। নিয়োগের ৩ মাসের মাথায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পেলো। আবার এর ২ মাসের মাথায় বিভাগের চেয়ারম্যান পদ পেলো। যখন জানাজানি হলো উনার এম,এস,সি নাই। ১৫ দিনের মধ্যে জরুরী রিজেন্ট বোর্ড করে উনার ঐ বিভাগের নিয়োগের নীতিমালাই পরিবর্তন করে দিলেন। শুনেছি এরপর ঐ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন ৩য় বর্ষে, তখন এম,এস,সি খোলা হলো। চেয়ারম্যান মহোদয় আক্কাস সাহেব হলেন বিভাগের প্রথম ছাত্র। উপাচার্য মহোদয় ৩জন পার্টটাইমার শিক্ষক নিয়োগ দিলেন তার জন্য। এরপর সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আক্কাস সাহেব এম,এস,সি ডিগ্রী শেষ করলেন। আর ঐ তিন জন পার্ট-টাইম শিক্ষককে উনি উনার সহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিলেন। এইতো গেল উনার নিয়োগ প্রমোশনের কাহিনী।
এরপর এই আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে নানা সময় তারই বিভাগের ছাত্রীরা যৌন হয়রানির অভিযোগ করে যা প্রশাসন নানা dilidaly করে পার পেয়ে যায়। সর্বশেষ দুই ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের প্রায় দুই মাস পরেও কোনও প্রতিকার না পেয়ে ৩ এপ্রিল ফেসবুকে ঘটনা প্রকাশ করেন অভিযোগকারীদের এক বন্ধু। তারপর থেকে বিষয়টি গতি পায়। এখন বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ঘটনা না ছড়ালে কোন কোন অন্যায়েরই বিচার হচ্ছে না। এদিকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা জানতে পেরে অভিযোগকারীদের টেলিফোনে যোগাযোগ করে ‘কী প্রমাণ আছে’ বারবারই তা জানতে চান অভিযুক্ত শিক্ষক। একপর্যায়ে তিনি অভিযোগকারীকে বলেন, প্রমাণ হাজির না করে তিনি কী করে অভিযোগ করেন। এই কথা বলার মাধ্যমেও বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা।
এরই মধ্যে চাপের মুখে পরে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গঠিত কমিটির পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলা হয়। এদিকে গতকাল একটি অফিস আদেশ আমার হাতে এসেছে। যেখানে লেখা হয়েছে “১. জনাব মোঃ আক্কাস আলীকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং ২. জনাব আক্কাস আলীকে জুন ২০১৯ থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত একাডেমিক এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে”। প্রথম কথা হলো এইসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কারণ নিশ্চই তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। আর এইরকম গুরুতর অভিযোগের সত্যতা প্রমান হলে এইরকম শাস্তি কি কাম্য? শুনছি এই লম্বা ছুটি আসলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ছুটি হিসাবে। অর্থাৎ সেই লাভবানই হলো। শাস্তি কি হলো তাহলে?
সবকিছু পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে আক্কাস আলীর পেছনে প্রশাসনের কৃপা কত প্রকট। তার নিয়োগ, তার প্রমোশন, তার যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা সবকিছু একটি কথাই প্রমান করে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভিসি নিয়োগ দিলে তারা মনে করতেই পারে তাদের পেছনে সরকারের শক্তি সর্বদা বিদ্যমান। তারা যা কিছুই করুক কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। আমারতো ধারণা আক্কাস আলীর নিয়োগে টাকা লেনদেন হয়েছে না হলে প্রশাসন তাকে প্রমোশন দেওয়া থেকে শুরু করে সকল বিপদে এত সহায়ক হবে কেন?
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ওভারহাউলিং করুন। এইসব অন্যায়ে যারা নিয়োজিত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন। তারপর দেশবিদেশ থেকে নামিদামি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করুন।
কামরুল হাসান মামুন
প্রফেসর – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।