বাংলাদেশী পাসপোর্টে মালয়েশিয়ায় যাবার চেষ্টায় ঢাকায় ২৬ রোহিঙ্গা আটক

বাংলাদেশী পাসপোর্টে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে ঢাকায় ২৬ রোহিঙ্গা আটক

বাংলাদেশি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নিয়ে বিদেশে পালানোর চেষ্টাকালে ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রাজধানীর খিলক্ষেত মধ্যপাড়া এলাকার কহিনুর ভিলা নামে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।

ওই বাড়ি থেকে বাংলাদেশি ৫৬টি পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বাড়ির মালিকের ছেলে কাজল ও আইয়ুব নামে এক দালালকে আটক করেছে পুলিশ।

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, আটক ২৬ রোহিঙ্গা সদস্যকে গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ঢাকায় এনে খিলক্ষেতের একটি তিন তলা বাড়িতে রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় এই বাড়িটিই বেছে নিয়েছিল তারা। তাদেরকে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র এখানে এনে রেখেছিল।

মালেয়েশিয়া পাঠানোর আগে এই বাসাতে তাদেরকে বাংলা ভাষা শেখানোর চেষ্টা চলছিল। মুলত তাদেরকে শিগগিরই মালেয়েশিয়া পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল।

এ ব্যাপারে ডিবির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোখলেসুর রহমান বলেন, আটককৃতদের কাছ থেকে ৫৬ টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। তারা দালালের মাধ্যমে ঢাকার ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে মালেয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্র তাদেরকে ঢাকায় এনেছে।

তিনি বলেন, এসব রোহিঙ্গারা কিভাবে পাসপোর্ট পেল তার তদন্ত চলছে। এখানো যারাই জড়িত থাক তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ভোর রাতে ডিবির একটি টিম মধ্যপাড়ার একটি বাসায় অভিযান চালায়। এর আগে তারা থানা পুলিশকে অভিযানের বিষয়টি জানায়। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে শিশুসহ ২৬ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আটক করেছে। এসময় সেখান থেকে আইয়ুব নামে এক দালালকে আটক করে ডিবি।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাসার মালিকের ছেলেকেও আটক করা হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর সবুজবাগের বৌদ্ধ মন্দিরে, বৌদ্ধভিক্ষু শরংকর থের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গারা যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ আছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই রাখাইনে ফিরে যেতে হবে। কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না উল্লেখ করলেও খুব শিগগিরই তারা ফেরত যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মিয়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে তাদেরকে নিয়ে নানান ভয়ঙ্কর খেলা খেলছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিশেষ করে এসব রোঙ্গিদের মাদক কারবারে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি জঙ্গিবাদেও জড়ানোর চেষ্টা রয়েছে চক্রের। এর আগে এমন অনেক রোহিঙ্গা সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব।

 

এক এনজিও কর্মীর অভিজ্ঞতা
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কর্মরত একটি এনজিও’র কর্মকর্তা শিউলি শর্মা বলেন, অনেক রোহিঙ্গা যে নিরাপত্তা বাহিনীর নজর এড়িয়ে শিবির থেকে বাইরে যাচ্ছে, এটা একরকম ‘ওপেন সিক্রেট’।

“প্রথম কথা শিবিরের কোনো বাউন্ডারি নাই। বাইরে যাওয়ার অনেক পথ। রাস্তা দিয়ে, পাহাড় দিয়ে বাইরে চলে যাওয়া যায়।”

তাছাড়া, শিউলি শর্মা বলছেন, চেহারা এবং ভাষার কারণে চট করে তাদের আলাদা করা সত্যিই মুশকিল।

“অনেক রোহিঙ্গা এখন বাঙালিদের মত পোশাক পরছে, তাদের মতো করে কথা বলতে শিখছে… লুঙ্গির বদলে জিনসের প্যান্ট পরছে।”

নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার শোনাতে তিনি বলেন, “কদিন আগে টেম্পোতে আমারই পাশে বসে কক্সবাজার আসছিল এক রোহিঙ্গা তরুণ। পরনে জিনস, শার্ট। আমি নিজেও ঘুণাক্ষরে বুঝতে পারিনি। পরে পুলিশ থামিয়ে অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর সে স্বীকার করে।”

how do you feel about this website ?

%d bloggers like this: