সাকিব আল হাসানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন মুশফিকুর রহিম। সান্ত্বনা দিতে থাকা সাকিবের চোখ গিয়েও গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। নিশ্চয়ই বুঝছেন, এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র দুই রানের সেই হৃদয়বিদারক হারের ক্ষতের কথা মনে করিয়ে দেওয়া।
অমন ক্ষত আরও পাঁচবার হজম করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
গত নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে গিয়ে দিনেশ কার্তিক নামের এক ঘাতকের করণে শিরোপা ছোঁয়া হয়নি বাংলাদেশের। গত এশিয়া কাপে ভারতের কাছে হারতে হয়েছে শেষ ওভারে গিয়ে। যন্ত্রণার আরও কতো উদাহরণ।
সব মিলিয়ে এর আগে ছয়টি ফাইনাল খেললেও শিরোপা নিয়ে উল্লাস করার সৌভাগ্য হয়নি বাংলাদেশের। আর্জেন্টিনা-লিওনেল মেসির ফাইনাল দুর্ভাগ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা উঠে গিয়েছিল। কাল রাতে আক্ষেপ ঘুচেছে।
দীর্ঘ নয় বছর আর ছয়টি ফাইনালে হারার পর কাল প্রথম কোনো শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে কাল বৃষ্টি আইনে উইন্ডিজকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। তবে আক্ষেপ ঘুচানো জয়টা কিন্তু সহজে আসেনি।
ফাইনালে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের কচুকাটা করে ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তুলে ফেলেছিল উইন্ডিজ।
পরে এর চেয়েও কঠিন অবস্থায় ফেলে দিল বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থেকেছে বেশ কয়েক ঘণ্টা। বৃষ্টি যখন থামল ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে করা হলো ২৪ ওভার। উইন্ডিজ আর কয়েক ওভার ব্যাটিং করে ১৫২/১ স্কোর গড়ে। আর তাতেই বাংলাদেশের ওপর ডিএল ম্যাথোডের ‘নির্যাতন’ নেমে এলো।
উইন্ডিজ ২৪ ওভারে ১৫২ করলেও ডিএক ম্যাথোডে বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ালো ওই ২৪ ওভারেই ২১০! উইকেট একে তো গতিময় তার উপর দীর্ঘ সময় ধরে হলো বৃষ্টি, ক্যারিবিয়ান পেসারদের জন্য রীতিমতো পেসস্বার্গে পরিণত হয়েছিল।
এদিকে, ইনজুরির কারণে ছিলেন না দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সব মিলিয়ে অনেকটা এভারেস্ট পাড়ি দেওয়ার মতো সমীকরণ! কঠিন সমীকরণটা কি সুন্দরভাবেই না মেলাল বাংলাদেশ।
সমালোচনাকে আরও দূরে সরিয়ে দেওয়ার টার্গেট করে যেন ব্যাটিংয়ে নামলেন সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়াকে যারা আশ্চর্য মনে করছিলেন তাদেরকেও হয়তো একটা জবাব দেওয়ার কথা মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। ভয়ডরহীনভাবে কি দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না দেখালেন দুই তরুণ।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল অনেকটা এগিয়েছেন। সব মিলিয়ে সাত বল এবং পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের জন্য ২১৩ রান তুলে ফেলল বাংলাদেশ। আহা, কি সুন্দর ইতিহাস।
ম্যাচ শেষে ইতিহাস গড়া জয়টার বর্ণনা ঠিক এভাবে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, ‘আজকের এই জয়টা পুরোপুরি টিমওয়ার্ক। বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ জিতবে। শুরুতে দারুণ জুটি গড়েছে তামিম, সৌম্য। যেমন দরকার ছিল তেমনই ব্যাটিং করেছে সৌম্য। মাঝে মুশফিকুর রানের চাকা সচল রেখেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে আউট হলেও মোসাদ্দেক এবং মাহমুদুল্লাহ দুর্দান্ত ফিনিশিং দিয়েছে। সত্যিই দারুণ দলীয় পারফরম্যান্স।’
শুধু এই ম্যাচে কেন, পুরো সিরিজ জুড়েই তো দারুণ পারফরম্যান্স দেখাল বাংলাদেশ। চার ম্যাচ খেলে চারটিতেই জয়। চার জয়ের তিনটিই আবার উইন্ডিজের বিপক্ষে, অপরটি স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। বিশ্বকাপ প্রস্তুতিটা এর চেয়ে ভালো ভাবে কী আর হতে পারত!