নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ২শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী পদ খালি রয়েছে ।বিভিন্ন পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের । লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ইউএনও কার্যালয়, হাসপাতাল, কৃষি, এলজিইডি, মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও রায়পুর সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন দপ্তরে পদগুলো শূণ্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। নতুন কর্মকর্তা পদায়ন না হওয়ায় একজন কর্মকর্তা একাধিক দপ্তরের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে । এ কারণে নিজ উপজেলার একজন কর্মকর্তাকে ঠিকমত পাচ্ছেন না ওই উপজেলার লোকজন। শূন্য পদ গুলোতে নিয়োগের জন্য বারবার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৪টির মধ্যে ৩টি পদ , সহকারি কমিশনার ভূমি কার্যালয়সহ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ১০টি পদ , ১৫ বছর ধরে সরকারি হাসপাতালের ৯ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ২৬ জন স্বাস্থ্য সহকারি, ৮ জন নার্স এর পদ , ২০১২ সাল থেকে মৎস প্রজনন ও প্রশিন কেন্দ্রে ৮৩ পদের মধ্যে ৬৪ জন কর্মকর্তার পদ , ২০১৫ সাল থেকে প্রানী সম্পদ কার্যালয়ে ১১ পদের মধ্যে ৭টি পদ , ২০১৬ সাল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে শুধুই সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শুণ্য এবং প্রাথমিক শিক্ষা ১০টির মধ্যে ৩টি পদ খালি রয়েছে ।
সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ৩১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৯ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ শূন্য রয়েছে ১২টি। ৮ জন নার্স, মেডিকেল নেকনোলোজিষ্ট ৬ জন, ষ্টোর কিপার ১ জন, অফিস সহকারি একজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৪ জন এবং ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৫৫ টি পদে ২৬ জনের পদ শন্য রয়েছে।
২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে সরকারি কলেজে অধ্যক্ষের পদ সহ গত ১৫ বছর ধরে ১০ জন শিক্ষক পদ শুণ্য। চার বিভাগে নেই কোন শিক্ষক । আমার বাড়ী আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক অফিসে ২৬ টির মধ্যে ৪টি পদ খালি রয়েছে বলে খবর পাওয়া যায় । এলজিইডি কার্যালয়ে ২১টির মধ্যে চলতি বছরের গত দুই মাস প্রধান প্রকৌশলী ও ২০১৩ সাল থেকে ৯টি পদ খালি। ২০১৬ সাল থেকে হিসাব রক্ষক কার্যালয়ে ৯ জনের মধ্যে অডিটরসহ ৩টি পদই খালি। মৎস অফিসে ৫টির মধ্যে ২০১৭ সাল থেকে সিনিয়র মৎস কর্মকর্তাসহ ৩টি পদ , ২০১৮ সাল থেকে যুব উন্নয়ন অফিসে ৭টির মধ্যে দুটি পদ খালি , ২০১৫ সাল থেকে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে প্রধান কর্মকর্তাসহ দুটি পদই খালিিএবং ২০১৬ সাল থেকে সমাজ সেবা কার্যালয়ে ১৬ টি পদের মধ্যে ১২টি পদই রয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে প্রধান কর্মকর্তাসহ উপ-সহকারি প্রকৌশলীর পদ শুণ্য। প্রধান কর্মকর্তা রামগঞ্জ উপজেলা থেকে এসে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । খাদ্য কার্যালয়ে ৫টির মধ্যে খাদ্য পরিদর্শকসহ ৩টি পদ ২০০৩ সাল থেকে খালি , ২০১৫ সাল থেকে পরিসংখ্যান কার্যালয়ে ৫টির মধ্যে ৩টি পদই খালি। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে ১২ বছর ধরে ২ ডাক্তারসহ ৩১টি পদ শুণ্য রয়েছে তবে সেক্ষেত্রে প্রধান কর্মকর্তা ১৮ বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন । থানায় দু’জন পুলিশ সদস্যের পদ খালি। আনসার ভিডিপির প্রধান কর্মকর্তার পদ খালি ।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ হোসেন বলেন, ‘একজন কর্মকর্তা কয়টি দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আমি নিজ পদ ছাড়াও সদর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলিপ দে বলেন, রামগঞ্জ উপজেলা থেকে রায়পুর এসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। অনেক সময় কাজের চাপে মাঠে থাকলে জনপ্রতিনিধিরা না পেয়ে মন খারাপ করে চলে যেতে হয়।
রায়পুর সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বাহারুল আলম বলেন, টেকনেশিয়ানসহ ৭ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তার পদগুলো কয়েক বছর ধরে শুণ্য পড়ে আছে। প্রতিমাসে দপ্তরে চিঠি দিয়ে অবহিত করলেও কোন লাভ হচ্ছে না।
বিআরডিবি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুস সাত্তার বলেন, দুই জনের কাজ এক সঙ্গে করা খুব কষ্টের। উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে না পারি বলতে, না পারি সইতে।
রায়পুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, ১৭টি সরকারি দপ্তরের প্রায় ২’শ শূন্যপদে কর্মকর্তা পদায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। ধীরে ধীরে পদগুলো পূরণ হবে বলে আমরা আশাবাদি।