লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

 

আচঁলে মেঘনার মায়া ডাকাতিয়া বুকে, রহমতখালি বয়ে চলে মৃদু এঁকে বেঁকে।
নারিকেল সুপারি আর ধানে ভরপুর আমাদের আবাস ভূমি প্রিয় লক্ষ্মীপুর।
নাম না জানা এক কবি তার কবিতার ৪টি পংক্তির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের পুরো বর্ণনা দিয়েছেন।

 

লক্ষ্মীপুর জেলায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছ ।

লক্ষ্মীপুরের দর্শনীয় স্থান সমুহের মধ্য, মেঘনা নদী,  নদীর অসংখ্য দ্বীপ, মতির হাট আর মজু চৌধুরীর হাট মাছ ঘাট, নারিকেল ও সুপারির বাগান,দালাল বাজার জমিদার বাড়ি, খোয়া সাগর দিঘী, রায়পুরের জিনের মসজিদ, তেগাছিয়া সুইচ গেট ও বিশাল ঝাউবন, রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পৌর শিশুপার্ক অন্যতম।

 

 

 

মেঘনা নদী:

“রুপালী ইলিশের চক চকে খনি এই আমাদের মেঘনা-নদী”

মেঘনা নদী বাংলাদেশের একটি বড় নদী। এ নদীতে প্রচুর রূপালী ইলিশ পাওয়া যায়। রামগতির বেশির ভাগ লোকেরই আয়ের বড় একটি অংশ হচ্ছে মেঘনায় মাছ। এখানকার প্রায় সব জেলে আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া মেঘনা নদীতে নৌ ভ্রমণ করা যায়। মেঘনা নদীতে রুপালী ইলিশ পাওয়া যায়। ঢাকা চট্টগ্রাম নৌযান জাহাজ চর ফলকন ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরবর্তী হয়ে চলাচল করে। ভোলা ও বরিশাল জেলার লোকজন লক্ষ্মীপুর ও কমল-নগর চরফলকন হয়ে মেঘনা নদীতে ফেরী ও ষ্টীমার যোগে চলাচল করে থাকে। চর ফলকন এলাকায় মেঘনা নদীতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য খুবই মনোরম ও সুন্দর লাগে। নদীর ঢেউয়ের মাতানো খেলা দেখে নিজের মন মুগ্ধ হয়ে যায়। নিজেকে অনেক আনন্দ দেওয়া যায়।স্থানীয় ভাবে জিও ব্যাগে মেঘনা নদীর হাত থেকে চর ফলকন ও কমল-নগর উপজেলাকে রক্ষা করার জন্য স্থানীয় ভাবে জিও ব্যাগে বাধ কার্যক্রম চলছে। নদীর এই বাধ দেখার জন্য শত মানুষ প্রতি দিন মেঘনা তীরবর্তীতে ভীর জমায়। এটি লক্ষ্মীপুর জেলার দর্শনীয় অন্যতম স্থান।

লক্ষ্মীপুর থেকে বাসে অথবা সিএনজিতে আসা যায়। কমল-নগর উপজেলার হাজির হাট বাজারে নামতে হবে এবং রিক্সা বা সিএনজি যোগে চর ফলকন ইউনিয়নের মেঘনা-নদীর তীরে যাওয়া যাবে।

 

 

মেঘনা নদী

 

 

নারিকেল ও সুপারির বাগান:

লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর ও রামগঞ্জ এলাকা নারিকেল ও সুপারি চাষের জন্য বিখ্যাত। বিশেষত দালাল বাজারের পশ্চিমে চর মন্ডল, রাখালিয়া মহাদেব-পুর, হায়দরগঞ্জের বিস্তীর্ণ নারিকেল ও সুপারি বাগারে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ পর্যটকদের আকৃষ্টনা করে পারে না। নারিকেল গাছের চিরল পাতার ফাকে বাতাসের ঝাপটা, সুউচ্চ-সুপারি গাছের সারি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। সয়াবিন চাষের জন্য লক্ষ্মীপুরের কমল-নগর, রামগতি বিখ্যাত। দেশের সয়াবিনের উল্লেখযোগ্য যোগান এ অঞ্চল থেকে যায়।

লক্ষ্মীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সি এন জি যোগে যাওয়া যায়। রায়পুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সি এন জি যোগে যাওয়া যায়।

 

 

 

দালাল বাজার জমিদার বাড়িঃ

দালাল বাজার জমিদার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের অন্যতম ও ঐতিহাসিক স্থান। জেলা সদরের পশ্চিম-লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজারে এর অবস্থান। লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব প্রায় ৪ শত বছর পূর্বে কলকাতা থেকে কাপড়ের ব্যবসা করতে দালাল বাজার আসেন। তার উত্তর পুরুষরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক এজেন্সি এবং পরে জমিদারী লাভ করেন। বাণিজ্যিক এজেন্ট হওয়ায় স্থানীয়রা তাদেরকে মনে প্রাণে গ্রহণ করেনি। তাদের ‘দালাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জমিদারগণ পালিয়ে গেলে তাদের পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ীটি রয়ে যায়। এটি আজ সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের মুখে। প্রায় ৫ একরের এ জমিদার বাড়ীর সম্মুখের রাজগেট, রাজ প্রাসাদ, জমিদার প্রাসাদ, অন্দর মহল প্রাসাদ, বাড়ীর প্রাচীর, শান বাঁধানো ঘাট, নাট মন্দির, পূজা মন্ডপ, বিরাটকারের লোহার সিন্দুক, কয়েক টন ওজনের লোহার ভীম প্রভৃতি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে। বিচার আসন ও নৃত্য আসন কে বা কারা সম্প্রতি নিয়ে গেছে। লক্ষ্মীপুর জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান।

 

লক্ষ্মীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সি এন জি তে দালাল বাজার , বাজারের পাশে জমিদার বাড়ি।সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১০টাকা ।

কামান খোলা জমিদার বাড়িঃ

জেলা সদরের পশ্চিম-লক্ষ্মীপুর গ্রামের কামাল খোলা বাজারের আধা কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত হরেন্দ্র বাবুর বাড়িটি। প্রাচীন জমিদার বাড়ি হিসেবে এর পরিচিতি আছে। এটিই কামান খোলা জমিদার বাড়ি। দুইশ’ বছরের পুরনো বাড়িটির সামনে একটি দ্বিতল ঠাকুরঘর। সুরক্ষিত প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ভেতরে গেলে চোখে পড়বে রাজপ্রাসাদ। এমন সুন্দর বাড়ি দেখতে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের ভিড় জমে।
লক্ষ্মীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সি এন জি তে কামান খোলা । ভাড়া জনপ্রতি ২৫ টাকা।

 

 

খোয়া সাগর দিঘী:

প্রায় ২৫ একর এলাকা জুড়ে দালাল বাজার সংলগ্ন খোয়া সাগর দিঘী। কুয়াশাকে স্থানীয় ভাষায় ‘খোয়া’ বলা হয়। দিঘীর বিরাট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ফলে এক প্রান্ত দাঁড়িয়ে অন্য প্রান্তে কুয়াশাময় মনে হত বলে এ দিঘীর নাম খোয়া সাগর দিঘী। আনুমানিক ১৭৫৫ সালে জমিদার ব্রজ বল­ভ রায় মানুষের পানীয় জল সংরক্ষণে এ দিঘীটি খনন করেন। এ দিঘী নিয়ে বহু উপ কথা ছড়িয়ে আছে।

খোয়া সাগর দিঘী লক্ষ্মীপুর জেলার আরেকটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

লক্ষ্মীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সি এন জি তে দালাল বাজার। বাজারের পাশে যাওয়ার পথে খোয়া সাগর দিঘী। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১০টাকা ।

 

 

খোয়া সাগর দিঘী

 

 

আরো পড়ুন, দালাল বাজার খোয়া সাগর দীঘি  click

রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র:

বাংলাদেশ বৃহত্তম এবং এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এটি ১৯৭৮-১৯৯২ সময়কালে ড্যানিডা, কর্তৃক গৃহীত নোয়াখালী আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্পে জেলার বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ছিল। বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য বিভাগের প্রতি তিনজনের একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের জন্য নিয়োজিত। ১৯৭৯ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে সর্বপ্রথম নেপাল থেকে মৃগেল মাছ আনা হয়। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে কৃত্রিম মৎস্য প্রজনন শুরু হয়। ২০০১ সালে ড্যানিডার কৃষি খাতের কর্মসূচির অধীনে ‘বৃহত্তর নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ উপ-কর্মসূচি,মৎস্য খাতের উন্নয়নের জন্য রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হয়। এই প্রকল্পের “পারিবারিক খামার” ও “গ্রামীণ চিংড়ি খামার” মডেল বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখে।

 

রায়পুরের জিনের মসজিদঃ

জনশ্রুতি আছে, ২০০ বছর আগে জিনেরা রাতের আঁধারে মসজিদটি নির্মাণ করেছে। মসজিদটি তৈরিতে টাকার যোগান দিয়েছে তারাই! এরপর কয়েক বছর ইবাদতও করেছে জিনেরা! গভীর রাতে তাদের জিকিরের আওয়াজ ভেসে আসতো। এর নাম মসজিদ-ই-আবদুল্লাহ। ১৮৮৮ সালে রায়পুর শহরের দেনায়েতপুর এলাকায় ৫৭ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদটি। এর দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট ও প্রস্থ ৭০ ফুট। এতে রয়েছে তিনটি গম্বুজ ও চারটি মিনার। প্রতিদিন অসংখ্য  দর্শনার্থী এখানে আসেন ।

লক্ষ্মীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অথবা বাসে রায়পুর । সেখান থেকে রিক্সায় অথবা হেটে যাওয়া যায় ।

 

 

রায়পুর জিনের মসজিদ

 

 

 

তিতা খাঁ জামে মসজিদ:

প্রায় ৩ শত বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীপুর শহরের উপর তিতা খাঁ মসজিদটি শৈল্পিক কারুকার্য এবং দৃষ্টি নন্দনতার জন্য সকল সময়ে খ্যাতি লাভ করেছে। ঐ সময় হযরত আজিম শাহ (র:) বাগানের মধ্যে মসজিদটি আবিষ্কার করেন। খ্যাতি অনুযায়ী হিন্দু-মুসলমান সকলে উদার হস্তে দান করতেন এ মসজিদে। বর্তমানে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ায় মসজিদটি সংরক্ষিত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিক্সা যোগে যাওয়া যায়। উত্তর স্টেশন থেকে হেটে যাওয়া যায় । এছাড়া অটো ভাড়া জনপ্রতি ৫ টাকা।

 

 

 

মতির হাট মাছ ঘাট:

এখানে প্রতিদিন জেলেরা নদী থেকে নানা প্রজাতির মাছ ধরে এই ঘাটে এনে উন্মুক্ত ভাবে বিক্রি করে। প্রতিদিন হাজারো জেলের মিলন মেলা হয় এই মতির হাট মাছ ঘাটে বিরল প্রজাতির মাছ পাওয়া এই ঘাটে। লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে মানুষ এখানে মাছ ক্রয় করতে আসে। মতির হাট মাছ ঘাটের সুনাম শুধু লক্ষ্মীপুর জেলায় নায় বৃহত্তম নোয়াখালীতে রয়েছে। যাদের বেশি মাছের প্রয়োজন হয় তারাই চলে আসে স্বনাম ধন্য এই মতির হাট মাছ ঘাটে। যে যার মতো করে চাহিদা অনুযায়ী নিয়ে যায় বিভিন্ন প্রকারের মাছ ক্রয় করে নিয়ে যায়।

লক্ষ্মীপুর ঝুমুর স্টেশন থেকে সিএনজি তে যাওয়া যায় । সিএনজি ভাড়া ৪০টাকা।

 

আরো পড়ুন-মজু চৌধুরী হাট  click

তেগাছিয়া সুইচ গেট ও বিশাল ঝাউবন:

জেলার সর্বদক্ষিণের জনপদ রামগতির দক্ষিণ-পূর্বে তেগাছিয়া বাজার পেরিয়ে মেঘনার কূলেই স্লুইস গেট। এখানে রয়েছে বেশ প্রশস্ত বিশাল ঝাউবন। সূর্যাস্তে মেঘনাতীর একদিকে যেমন অনিন্দ্যসুন্দর, তেমনই সারি সারি ঝাউগাছের মাঝে বিকেলের সূর্যের উঁকি মন ছুঁয়ে যায়। তবে এতদিন এখানকার তেমন পরিচিতি ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুসংখ্যক তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে তেগাছিয়াকে তুলে ধরায় ভ্রমণ-প্রেমীদের আকর্ষণ করেছে
ঝুমুর স্টেশন থেকে বাসে অথবা সি এন জি তে রামগতি উপজেলা,  সেখান থেকে তেগাছিয়া বাজার পেরিয়ে মেঘনার কূলেই সুইচ গেট।

লক্ষ্মীপুর পৌর শিশু-পার্ক:

লক্ষ্মীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র রহমত-খালী খালের নিকটবর্তী অবস্থিত লক্ষ্মীপুর পৌর শিশু-পার্ক যা শিশু-কিশোরদের আনন্দ বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। শিশুদের বিনোদনের জন্য সরকার ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এটি এটিই লক্ষ্মীপুর জেলার অন্যতম শিশু-পার্ক যা ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রতিষ্ঠাতা জনাব আলহাজ্ব আবু তাহের, মেয়র, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা এবং উদ্বোধন করেন জনাব মো: বদিউজ্জামান, সাবেক দুদক চেয়ারম্যান। প্রতিদিন সকাল ১০.০০- সন্ধ্যা ৮.০০ টা পর্যন্ত রাইডগুলো চালু থাকে।

পৌর শিশুপার্কে প্রতিদিন এক থেকে দুই হাজারের অধিক মানুষ এসে থাকে। আর ইদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মত আনন্দঘন সময়ে তা কয়েকগুন বেড়ে যায়।

লক্ষ্মীপুর ঝুমুর স্টেশন অথবা উত্তর স্টেশন থেকে রিক্সা/অটো রিক্সা যাওয়া যায় ভাড়া জনপ্রতি ১০/১৫ টাকা।

 

 

লক্ষ্মীপুর জেলাকে জানতে পড়ুন click

how do you feel about this website ?

%d bloggers like this: