লক্ষ্মীপুরের নারীদের তৈরি টুপি যাচ্ছে বিদেশে বদলে যাচ্ছে ভাগ্য

 

ডালিম কুমার দাস টিটু:

লক্ষ্মীপুরের নারীদের হাতের তৈরি টুপি যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বদলে যাচ্ছে তাদের ভাগ্য। স্বাবলম্বী হচ্ছে শত শত পরিবার।

 

মাত্র কাপড় আর সুইসুতা দিয়ে গ্রামীন নারীদের হাতে তৈরি হচ্ছে টুপি। তাদের নিপুন হাতের তৈরি টুপি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন বিশ্বে। শখের বসিভূত টুপি এখন গ্রামের নারীরা তৈরি করছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। তাদের হাতে বুনন করা এ টুপি যাচ্ছে ঢাকা-চট্রগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বাহিরে ওমানসহ বিভিন্ন দেশে। এতে আর্থিক ভাবে সাবলম্বি হচ্ছেন নারী সমাজ। এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে নারীরা তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ স্বামীর আয়ের পাশাপাশি নিজেরাও সংসারের হাল ধরছেন। বিশেষ করে এই টুপি ওমানে বেশি যাচ্ছে । তবে ওমান দেশটি সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাাই নেই। সদর উপজেলার মিয়ারবেড়ীঁ, পূর্ব চরমনসা ও কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ও চরফলকনের কয়েকটি গ্রাম সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ পরিবারে সংসারের কাজের ফাঁকে মহিলারা এবং লেখা-পড়ার পাশাপাশি স্কুল পড়–য়া মেয়েরা টুপি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছে। একই চিত্র রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে। যেহেতু বেশিরভাগ টুপি ওমানে যায় তাই তারা এই টুপির নাম দিয়েছেন ওমানি টুপি।

 

রামগতি পৌরসভার সাহাপাড়া, চরহাছান হোসেন ও পন্ডিত পাড়াতে এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছেন প্রায় শতাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী। অথচ তাঁদের হাতের তৈরি টুপির কদর ওমান দেশটিতে খুবই প্রাধান্য পায়। বাংলাদেশের নকশিকরা এই টুপি ওমানে ‘কুপিয়া’ নামে পরিচিত। সাধারণত ‘কেন্দুয়া’র (পাঞ্জাবির মতো পোশাক) সঙ্গে কুপিয়া পরেন সেখানকার পুরুষেরা।
বিশেষ মহলের দাবি সরকারী বা কোন দাতা সংস্থার সহযোগীতা পেলে এ পেশায় জেলার নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশী স্বাবলম্বী হবে পরিবারগুলো। এবং বিপুল পরিমান বৈদেশীক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে ।
কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ইয়াসমিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, খুব অল্প বয়স থেকে মায়ের কাছ থেকে টুপি বুননের কাজ শুরু করি। আমার অধীনে এখন ৫’শ থেকে ৭’শ মহিলা এ কাজ করেন। আলেকজান্ডার বাজারের মহাজন থেকে সুতা-কাপড় এনে মহিলাদের দেন তিনি। প্রতি মাসে ৪০-৫০টি টুপি মহাজনকে দেন । প্রতিটি টুপি থেকে পান ২০-৩০ টাকা। সদর উপজেলার পূর্ব চরমনসা গ্রামের আলমগীর ব্যাপারী বাড়িতে দীর্ঘ দিন থেকে টুপি নকশীর কাজ করছে সুমী, পান্না, পাখি, নুপুর, জোৎসনাসহ অনেকে। নিজেদের উদ্বেগে টুপি বুনিয়ে সাবলম্বী হচ্ছেন তারা। একজনে একটি টুপি বুনে পান ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে তাদের অভিযোগ, মহাজন যে দাম নির্ধারণ করে দেন কাজ শেষে তাদের সেই দাম দিতে চায়না তারা । এতে করে টুপি বানাতে অনেকে অনিহা প্রকাশ করে।

 

টুপি বানানোর অন্যতম কারিগর মারজাহান, পারুল ও সুরমা বলেন, আমাদের এলাকায় ২ শতাধিক নারী টুপি তৈরির কাজ করেন। পার্শ্ববর্তী মিয়ারবেড়ী এলাকায় একই ধরনের টুপি বানানোর কাজে যুক্ত আরও প্রায় ২০০ নারী আছেন। টুপির নকশা, কাপড় ও সুতা-সবকিছুই সরবরাহ করতে হয় তাদের। নকশা অনুযায়ী হাতের কাজ করা একটি টুপির জন্য গ্রামের একজন নারীকে দেওয়া হয় ৭’শ থেকে হাজার টাকা। তবে অতি সূ²ভাবে এই কাজ করতে হয় বলে একজন নারীর পক্ষে মাসে ১টি বা ২টির বেশি টুপি তৈরি করা সম্ভব হয় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, টুপি তৈরির কাজে যুক্ত হওয়ায় স্বামীর পাশাপাশি নারীরা সংসারের কিছুটা হলেও আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারছেন। এতে সংসারে নারীর মর্যাদা বাড়ছে। সরকার তাদের প্রতি একটু নজর দিলে তারা এই কাজটিকে আরেকটু জোরালো ভাবে ধরতে পারতো। রামগতি কমলনগরের বেশিরভাগ মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আশ্রয় নেয় পরের জায়গায়। নদীভাঙ্গা মানুষগুলো ভবানীগঞ্জ থেকে কমলনগরের প্রধান সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় ছোট ছোট ঘর করে থাকে। এখানের প্রায় সব বাড়িতেই টুপি বুননের কাজ করেন নারীরা। এতে নদী ভাঙ্গা দরিদ্র পরিবার গুলো আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে কিছুটা হলেও সক্ষম হচ্ছেন।

এসব নারীদের সরকারি ভাবে সহযোগিতা, এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে পারলে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হতেন এবং লক্ষ্মীপুরের এই টুপি শিল্পটি আরো প্রসারিত হোতো । এই টুপি শিল্পের মাধ্যমে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

how do you feel about this website ?

%d bloggers like this: