ডালিম কুমার দাস টিটু ঃ সারাদেশে করোনা মহামারির কারনে একদিকে আতঙ্ক অন্যদিকে জীবন জিবীকার লড়াই করছে সাধারণ মানুষ । কিন্তু প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে থেমে ছাত্রচাত্রীরা । লক্ষ্মীপুরে কলেজে পড়ুয়া দুই বোনের শিল্পকর্মে মুগ্ধ হয়ে উঠেছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্রেতারা। একরকম শখ করে দুই বোনের রং-তুলিতে ক্যানভাস রাঙানোর নৈপূন্যতা দেখা যায় । তাদের চিত্রকর্মে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অন্যন্য তরুণীরাও। লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের মজুপুরে গ্রামে ভাড়া বাসার পড়ার রুমটা যেন চারু-কারু শিল্পের মিনি প্রতিষ্ঠান। তাদের স্বপ্ন এখন স্থানীয়ভাবে একটা চারু-কারু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার । খবর নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের উত্তর মজুপুরে অবস্থিত চাকরীজীবি ফজলুর রহিম মাহমুদ । মজুপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন । তার দুই কন্যা রয়েছে । দুইজনই কলেঝে লেখাপড়া করে। বড়জন ফাতেমাতুজ জোহরা তাসনিম ও আর ছোটজন রুবাইয়া আক্তার তাফহিম। তাসনিম পড়াশুনা করছেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের একাউন্টিং বিভাগে আর তাফহিম একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাসার ড্রয়িং রুমটা যেন চিত্রকর্মের অনন্য সাজে সজ্বিত। পড়ার রুমটা যেন একটি চারু-কারু শিল্পের মিনি প্রতিষ্ঠান। আশে পাশের তরুণীদের চারু-কারু কাজ শেখানোতে ব্যস্ত তারা। এই দুই চিত্রশিল্পী বোনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ছোটবেলায় লেখাপড়ার পাশাপাশি দাদার কাছে তারা রংতুলির চিত্রকর্ম শিখেছিল ।এরপর বড়বোনের প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও মনোবলে আগ্রহী হয়ে উঠেন ছোট বোন তাফহিম। দু’বোন মাঝেমধ্যে সময় পেলে টুকটাক আঁকতো। সেগুলো তাদের নিজেদের ঘরে শোভা পেত আর নিজেদের মনের খোরাক মেটাতো। আঁকাআঁকি নিয়ে এ পর্যন্তই থাকতে চেয়েছিল তারা। মূল লক্ষ্য ছিল লেখাপড়ায় উচ্চশিক্ষা আর ভাল চাকরি করার। কিন্তু গত বছর থেকে মহামারি করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে তারা চিত্রকর্মে মনযোগী হয়ে উঠে। নিজেরা বেশ কিছু কাজ করে এ কাজের একটা ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে পোষ্ট দেয়। তা দেখে মুগ্ধ হয় দেশ-বিদেশের দর্শক। অনলাইনে অর্ডার আসে। এক দুই করে অনেক অর্ডার আসতে থাকে। এই কাজ থেকে বেশ উপার্জনও আসে তাদের। সম্প্রতি আমেরিকায় তাদের আঁকা ৫টি ছবি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন প্রতিভাবানরা । পরে তাদের কাজে একে একে যোগ হয় অয়েল পেইন্টিং, মান্ডালা ড্রয়িং,ডুডল আর্ট,ক্যালিগ্রাফি, ক্র্যাফট ডিজাইন, টাইফোগ্রাফি, টিশার্ট, শাড়ি, বোরকা, জামা ইত্যাদি তাদের রংতুলির শৈল্পিক ছোঁয়ায় হয়ে উঠে মনোমুগ্ধকর। তাদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী শিক্ষার্থী ও বেকার যুবতীরা তাদের কাছে চিত্রশিল্পের এ কাজ শেখার আগ্রহ নিয়ে ছুটে আসে। তারাও রাজি হয়। চিত্রকর্মের গ্রাহকরা মুগ্ধ হয়ে তাদের এ শিল্পকর্মকে এবং তাদেরকে এগিয়ে চলতে উৎসাহ দেন । শিল্পকর্মের অর্জন হিসেবে অনলাইনে একটি বিদেশী প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে তারা কেপিআর এ্যাওয়ার্ড আর্ট কম্পিটিশন-২ সম্মাননা সনদ অর্জন করেন বলে খবর পাওয়া যায়। এখন তাদের লক্ষ্য লক্ষ্মীপুরে একটা চারু-কারু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার । তবে এই দুই চিত্রশিল্পী তরুণ প্রজম্মকে চাকরীর পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বলেন । কারন একজন উদ্যেক্তাই একটি প্রতিষ্ঠান ।