ডালিম কুমার দাস টিটু ঃ লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী বাঁধের ধীরগতি । শংকাতে আছেন ভাঙ্গনকবলিত নদী পাড়ের মানুষ । হতাসায় ভুগছেন জেলাবাসী । আদৌ সরকারের বরাদ্দকৃত ৩ হাজার ১ শ কোটি টাকার কাজ সঠিক ভাবে হবে কিনা। চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট জনরা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বর্ষায় রাস্তাঘাট , স্কুল-কলেজ, মসজিদ মাদ্রাসা সহ কয়েক লক্ষ লোক হুমকির মুখে আছেন । লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর ভাঙ্গন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে পড়ছে । এরই মধ্যে কমলনগর ও রামগতির অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও স্থাপনা বিলীন হয়েছে। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙনরোধে দ্রুত স্থায়ী তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। সাম্প্রতি মেঘনায় অস্বাভাবিক জোয়ারে গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুরের দুটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। সামনের বর্ষায় নদীর এই ভাঙ্গন ভয়ংকর রুপ ধারন করবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা। ভয়াবহ হুমকির মুখে আছে কমলনগর উপজেলার লুধুয়া বাজার, পাটোয়ারীর হাট, সাহেবের হাট, মাতাব্বরহাট ও রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চর আলগীসহ ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো। হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী ভাঙন রোধ এর জন্য ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । এরিমধ্যে ২৪ টি স্পটে কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এবং ১৫ জন ঠিকাদারকে নির্ধারণও করা হয়েছে । ১৩ জন ঠিকাদার তাদের কাজ শুরু করলেও মাত্র ১ মাসের মাথায় অদৃশ্য কারনে উধাও হয়ে গেলো ঠিকাদাররা । এতে করে চরম শংকাতে আছেন রামগতি কমলনগরের ভাঙ্গন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষগুলি । ধীরে ধীরে সরকারের এই মেঘা প্রকল্প রামগতির নদী বাঁধের ওপর আস্থা হারাতে বসেছে জেলাবাসী। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কেন প্রকল্পে এত ধীরগতি ? এ নিয়ে হতাশায় আছেন নদী ভাঙ্গা মানুষ গুলো । অনেকেই ৬ থেকে ৭ ভাঙ্গা দিয়ে অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাই খুঁজছেন। আবার অনেকে রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে কোন রকমমাথা গোঁজার ঠাই করছেন । এমন পরিস্থিতিতে আগামী বর্ষাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরবাড়ি নদী গর্বে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । সম্প্রতি রামগতি-কমলনগর বাঁচাও মঞ্চের উদ্যোগে কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নে দ্রুত নদী বাঁধ এর কাজ চালু করার জন্য ভাঙন এলাকায় মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী । তথ্য মতে গত তিন যুগ ধরে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ২৬টি বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে চলতি মৌসুমের সয়াবিন সহ নানা প্রজাতের উঠতি ফসল ও বসত বাড়ি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে, টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো । হতাস নদীতীরের মানুষগুলো । বিশেষ করে রামগতি উপজেলার বিবিরহাট, রামদয়াল, রঘুনাথপুর বালুরচর, বাংলাবাজার, চরগাজী, চর আলগী, সেবাগ্রাম, বড়খেরী, চর রমিজ ও চর আবদুল্লাতে বর্তমানে কোটি টাকার ফসল ও ফসলি জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে উৎপাদিত সয়াবিনের মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলায় উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৭০ ভাগ সয়াবিন। গত বছর ৪৮ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে ৮৬ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় সোয়া ৩০০ কোটি টাকা। অচিরেই হয়তো নদী ভাঙ্গার কারনে ফসল এবং ফসলি জমি বিলিন হওয়ায় এই উৎপাদন হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য করেন কৃষি কর্মকর্তারা ।
এর আগে ২০১৭ সালে ২০০ কোটি টাকা ব্যায়ে মেঘনা নদীতে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ওই বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনসক্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কাজটি সম্পন্ন করেছেন। নির্মাণের পর এক বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনী বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণ করেছে। ওই তিন কিলোমিটার এলাকা এখন পর্যটন কেন্দ্রের মত প্রতিদিন বিকেলে মানুষের ভিড় দেখা যায় । জনমনে একটাই সংকোচ সেনাবহিনীর মত কাজটি হবে কিনা।
স্থানীয়রা বলছেন নদী বাঁধ করবে শুনছি কিন্তু কাজ এখনো শুরুই হয় নাই । আমাদের সব ভেঙ্গে নিয়ে গেলে পরে বাঁধ দিয়ে কি লাভ হবে ? এই বর্ষা থেকে বাঁচতে ডাম্পিং এর দাবি জানান তারা ।
জনপ্রতিনিধি উপজেলা ভাইস – চেয়ারম্যান রাহিদ হোসেন বলছেন সরকার মেঘনার তীর রক্ষায় যেই বরাদ্দ দিয়েছে ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েকটি স্পটে কাজ শুরু করলেও অদৃশ্য কারনে কাজগুলো বন্ধ হয়ে গেছে । অতি শীঘ্রই জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং না করলে হয়তো এই বর্ষায় নদীতীরের অনেক মানুষ দুর্ভোগের শীকার হবে। দ্রুত কাজ শুরু না করলে হয়তো রামগতি কমলনগরের মানুষগুলো যে আশা নিয়ে বুক বেঁধে ছিলো সেই আশা ভেঙ্গে যাবে। উপজেলা যুবলীগ নেতা বিশিষ্ট সমাজ সেবক মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলাল বলেন, যেভাবে নদী ভাংগছে এমন পরিস্থিতিতে সামনের বর্ষায় নদীপাড়ের মানুষগুলো কোথায় যাবে কিভাবে থাকবে তা নিয়ে সংকায় আছেন তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, নদীবাঁধের কাজটি স্লো আমি পানি উন্নয়নবোর্ডর দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি তিনি বলেছেন বালুর একটু ক্রাইসিস চলছে ,এছাড়াও অনেক ঠিকাদার এখনো কাজই শুরু করেননি । কাজটি শুরু করার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য সহকারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়নবোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, ১৫ জন ঠিকাদার কাজ শুরু করার কথা ১৩ জন কাজ শুরু করেছে কিন্তু চাঁদপুর থেকে বালু নিয়ে একটু সমস্যার কারনে কাজ সাময়িকের জন্য বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে চিটাগাং থেকে বালু এনে ২ জন কাজ চালাচ্ছেন। অন্যান্য ঠিকাদারদেরকে বলা হয়েছে অতি দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য আশা করি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে।