মিজানুর রহমান (সোহেল বাঙ্গালী) ঃ লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে ভিটে মাটি ছাড়া হচ্ছে হাজারো মানুষ। মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে রামগতি কমলনগর উপজেলার এসব মানুষ এখন মানবেতর জীবযাপন করছেন । নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে সরকারি বেসরকারি বহু স্থাপনা ও ফসলি জমি। সরকার নদী তীর রক্ষা বাঁধে আরো কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে টেকসই কাজের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।রামগতি-কমলনগরে মেঘনার ভয়াল থাবায় ভিটেমাটি ছাড়া হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি নদীতে বিলীন হয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চরবালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় , কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদ সহ অনেক স্থাপনা । নতুন ভবনটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয়। এ নিয়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ২০টি স্কুল ও মাদরাসা ভবন মেঘনার ভাঙ্গনের শিকার হয়। এ সকল প্রতিষ্ঠান পাশের ইউনিয়নগুলোতে স্থানান্তরিত করা হয় । রামগতির রঘুনাথপুরের পন্ডিতের হাট, আলেকজান্ডারের আসলপাড়া মাছবাজার, সেবাগ্রাম মাছবাজার, কমলনগরের ঐতিহ্যবাহী কাদির পন্ডিতের হাট, মাতাব্বর হাট, সাহেবের হাট, তালতলি বাজার, লুধুয়াবাজারসহ সাতটি ছোট-বড় হাটবাজার ধপায় ধপায় স্থান্তরিত হয়েছে । মেঘনার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে যুগ যুগ ধরে রামগতি-কমলনগরবাসীর একটাই দাবি টেকসই বেড়ি বাঁধ । চলতি বছরের পহেলা জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে সেই দাবির পক্ষে বিশাল একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপকূলীয় কমলনগর ও রামগতির অব্যাহত নদীভাঙন রোধে প্রায় ৩২ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করে সরকার। এ খবরে লক্ষ্মীপুর এর ২০ লক্ষাধিক মানুষ সরকারের প্রশংসা করেছেন । কিন্তু এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। কিন্তু মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেমে নেই। প্রতিদিনই নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে মানুষের বসতভিটা এবং ফসলি মাঠসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। বর্তমানে তালতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কাওমি মাদরাসা ও জামে মসজিদসহ বাজারটি বিলীন হওয়ার পথে। কমলনগর-রামগতি উপজেলার মানুষগুলোর কাছে ইয়াস, আম্ফান ও সিডরের চেয়েও ভয়ঙ্কর ‘নদী ভাঙ্গন’। এখানে প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ছোট হয়ে যাচ্ছে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মানচিত্র। এই নদী ভাঙনের কবলে পড়ে উপকূলের প্রতিটি পরিবার অসংখ্যবার বসতভিটা হারিয়েছে। নিঃস্ব হয়ে বহু মানুষ রাস্তার ধারে বা গাছ তলায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। সূত্র মতে, কমলনগর উপজেলার কালকিনি ও সাহেবের হাট ইউনিয়ন সহ সাতটি ইউনিয়নের ১৬ টি ওয়ার্ড নদী গর্ভে বিলীন। সাম্প্রতিককালে মেঘনার ভাঙনে চর ফলকন, সাহেবের হাট, চর কালকিনি, পাটওয়ারীরহাট, চর মার্টিন ও চর লরেন্স ইউনিয়নে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারা হয়েছে। একইভাবে বসতভিটা হারিয়েছে রামগতি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার লক্ষাধিক মানুষ । এ দিকে গত বছর মেঘনার ভাঙন থেকে কমলনগরের নাসিরগঞ্জ বাজার এলাকায় স্থানীয়দের অর্থায়নে ৫০ লাখ টাকা ব্যায়ে এবং তরুনদের স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ করা হয় তিন কিলোমিটার জংলাবাঁধ। কিন্তু মেঘনার ভয়াল থাবায় রক্ষা পায়নি সেই নাসিরগঞ্জ বাজার এবং কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদ। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান বলেন, গত ২০ বছরে মেঘনা কী পরিমাণ মানুষের সর্বনাশ করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে একনেক সভায় রামগতি-কমলনগর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগতি কমলনগরের সংসদ সদস্য মেজর (অব:) আবদুল মান্নানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সাথে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। উল্যেখ্য , ২০১৪ সালে রামগতি ও কমলনগরের মেঘনার তীর রক্ষাবাঁধ নির্মাণে একনেক সভায় ১৩৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে রামগতির আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। যা এখনো অক্ষত থাকার পাশাপাশি বাড়িয়ে দিয়েছে অবহেলিত চরাঞ্চলের সৌন্দর্য্য। একই প্রকল্পের অধীনে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কমলনগর এলাকায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। যা এক বছরের মধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে অদৃশ্য কারণে সম্পূর্ণ প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে অরক্ষিত থেকে যায় রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা উপকূল। তাই এবারের প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা । কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, রামগতি কমলনগরে বেড়িবাঁধের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে কথা বলেছেন সেই সাথে সাম্প্রতি সময়ে নাসিরগঞ্জ বাজারের ভাঙ্গন রোধে এবং জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া পরিবারদের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়াও ইতিমধ্যে কমলনগরের দুটি স্পটে ডাম্পিং করা হয়েছে আরো তিনটি জায়গায় দ্রæত সময়ের মধ্যে ডাম্পিং হবে বলে তিনি জানান। তবে দ্রæত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধের কাজটি শুরু করলে কমলনগরের মানুষ তাড়াতাড়ি ভাঙ্গনের হাত থেকে মুক্তি পাবে বলেও তিনি জানান।
লক্ষ্মীপুর মেঘনার ভাঙ্গনে সর্বহারা এলাকাবাসী ,শীঘ্রই শুর টেকশই বেড়ি বাঁধ
