লক্ষ্মীপুর ৩৭০০ [লক্ষ্মীপুর]

lakshmipur 3700

 

লক্ষ্মীপুর , রায়পুর , রামগঞ্জ , কমলনগর, রামগতি , চন্দ্রগঞ্জ ৬টি উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা । লক্ষ্মীপুর নামে সর্বপ্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬০ সালে। জানুন – জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, ব্র্যান্ডিং সহ সকল তথ্য। লক্ষ্মীপুর ৩৭০০।

 

লক্ষ্মীপুর জেলার ইতিহাস-
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে লক্ষ্মীপুর ভুলুয়া রাজ্যের অধীন ছিল। মুঘল ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে লক্ষ্মীপুরে একটি সামরিক স্থাপনা ছিল। ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লবণ উৎপন্ন হত এবং বাইরে রপ্তানি হত। লবণের কারণে এখানে লবণ বিপ্লব ঘটে। স্বদেশী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরবাসী স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে। এ সময় মহাত্মা গান্ধি এ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তখন প্রায়ই কাফিলাতলি আখড়া ও রামগঞ্জের শ্রীরামপুর রাজবাড়ীতে অবস্থান করতেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর সফরে আসেন।

 

জেলার প্রতিষ্ঠাকাল-

লক্ষ্মীপুর নামে সর্বপ্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬০ সালে।  এরপর ১৯৭৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ৫নং বাঞ্চানগর ইউনিয়ন বর্তমান পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। পরে এই পৌরসভাটির বিস্তৃতি ঘটে। রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৯ জুলাই  মহকুমা এবং একই এলাকা নিয়ে ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা।

 

জেলা অবস্থান ও সীমানা-
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২°৩০´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে লক্ষ্মীপুর জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে চাঁদপুর জেলা; পূর্বে ও দক্ষিণে নোয়াখালী জেলা এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, ভোলা জেলা ও বরিশাল জেলা অবস্থিত।  শহর রহমতখালি নদীর তীরে অবস্থিত।

নামকরণ –
জেলার নামকরণ নিয়ে কয়েকটি মত প্রচলিত রয়েছে।
১. লক্ষ্মী, হিন্দু ধর্মানুসারে ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী (দুর্গা কন্যা ও বিষ্ণু পত্নী) এবং পুর হল শহর বা নগর। এ হিসাবে লক্ষীপুর এর সাধারণ অর্থ দাঁড়ায় সম্পদ সমৃদ্ধ শহর বা সৌভাগ্যের নগরী। ঐতিহাসিক কৈলাশ চন্দ্র সিংহ রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস লিখতে গিয়ে তৎকালীন নোয়াখালীর পরগণা ও মহালগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন। এতে দেখা যায়, বাঞ্চানগর ও সমসেরাবাদ মৌজার পশ্চিমে লক্ষ্মীপুর নামে একটি মৌজা ছিল। আজকের পশ্চিম ললক্ষীপুর মৌজাই তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজা।

২. আবার অন্যমতে, সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা আরাকান পলায়নের সময় ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি ধাপা ও শ্রীপুর হয়ে ৯ মে লক্ষ্মীদাহ পরগনা ত্যাগ করে ভুলুয়া দুর্গের ৮ মাইলের মধ্যে আসেন। ১২ মে ভুলুয়া দুর্গ জয় করতে না পেরে আরাকান চলে যান। সেই লক্ষ্মীদাহ পরগনা থেকে লক্ষ্মীপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ ধারণ করেন।  শহরের পূর্ব পাশে শাহ সুজার নামানুসারে একটি সড়কের নামকরণ করা হয় সুজা বাদশা সড়ক। বিখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরী সুজা বাদশা সড়ক নামে একটি ইতিহাস গ্রন্থও রচনা করেছেন।

৩. ১৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে মগ ও ফিরিঙ্গীদের মিলিত বাহিনী ভুলুয়া, ভবানীগঞ্জ ও ইসলামাবাদ আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। স্যার যদুনাথ সরকার এ সংক্রান্ত বর্ণনায় লিখেছেন, ইসলামাবাদ চাটগাঁ শহর নয়। ভুলুয়ার পশ্চিমে একটি দুর্গ সমৃদ্ধ শহর। ঐতিহাসিক ড. বোরাহ ইসলামাবাদকে লক্ষীপুর বলে ধারণা করেছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজার অংশ মেঘনা পাড়ের দুর্গ সমৃদ্ধ কামানখোলাই ইসলামাবাদ নামের মগ ও ফিরিঙ্গীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল।

৪. শ্রী সুরেশ চন্দ্রনাথ মুজমদার রাজপুরুষ যোগীবংশ নামক গবেষণামূলক গ্রন্থে লিখেছেন দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে রাজা উপাধি পেয়েছেন। তার পূর্বপুরুষরা ১৬২৯ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দালাল বাজার আসেন। তার বংশের প্রথম পুরুষের নাম লক্ষ্মী নারায়ণ রায় (বৈষ্ণব) এবং রাজা গৌর কিশোরের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী প্রিয়া। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, লক্ষ্মী নারায়ণ রায় বা লক্ষ্মী প্রিয়ার নাম অনুসারে লক্ষ্মীপুরের নামকরণ করা হয়।

 

আচঁলে মেঘনার মায়া ডাকাতিয়া বুকে, রহমতখালি বয়ে চলে মৃদু এঁকে বেঁকে।
নারিকেল সুপারি আর ধানে ভরপুর আমাদের আবাস ভূমি প্রিয় লক্ষ্মীপুর।

নাম না জানা এক কবি তার কবিতার ৪টি পংক্তির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের পুরো বর্ণনা দিয়েছেন।

জেলার ব্র্যান্ডিংঃ “সয়াবিন ও নারিকেল সুপারির লক্ষ্মীপুর”

 

আরো পড়ুন, লক্ষীপুর জেলার জানা অজানা তথ্য ও বিভিন্ন প্রশ্নের [?] উত্তর click

লক্ষীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ click

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ click

 

জেলার আয়তন ও জনসংখ্যা-
জেলার মোট আয়তন ১৪৫৬ বর্গ কিঃ মিঃ। সদর-৫১৫ বর্গ কিঃ মিঃ, রায়পুর-২০১ বর্গ কিঃ মিঃরামগঞ্জ-১৬৯ বর্গ- কিঃ মিঃ, রামগতি-২৮৮ বর্গ কিঃ মিঃকমলনগর-২৮৩ বর্গ কিঃ মিঃ ।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলার মোট জনসংখ্যা ১৭,২৯,১৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮,৬৬,৮৬৮ জন এবং মহিলা ৮,৬২,৩২০ জন। মোট জনসংখ্যার ৯৫.৩১% মুসলিম, ৪.৬৬% হিন্দু এবং ০.০৩% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।

লক্ষ্মীপুর জেলার প্রশাসনিক বিভাগের কোড: ২০৫১

লক্ষ্মীপুর পোষ্ট কোড: ৩৭০০

 

 

লক্ষীপুর পৌরসভাঃ

রহমতখালী নদীর উভয় পাড়ে বাঞ্চানগর মৌজার দক্ষিনাংশ পাশ্ববর্তী সাহাপুর, সমসেরাবাদ , মজুপুর ও মৌজার কিছু অংশ নিয়ে  পৌরসভা । ০১,০৯,১৯৭৬ সালে মরহুম নছির আহাম্মদ ভূঁইয়ার প্রস্তাবে লক্ষীপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়। যা পুর্বে ছিলো সদর উপজেলার ০৫নং ইউনিয়নে অন্তভুক্ত ।’’ক’’ শ্রেণীভূক্ত এই পৌরসভাটির বর্তমান আয়তন ২৭.০০বর্গ কি:মি:।

স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২০০জন। পূর্বে ১২টি ওয়ার্ড থাকলেও আবির নগর, লাহারকান্দি, আটিয়াতলী ও পশ্চিম লক্ষীপুর মৌজার কিছু অংশ একীভূত হয়ে ১৫টি ওয়ার্ডে পরিণত হয়।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া।

 

লক্ষ্মীপুর জেলার শিক্ষার হারঃ লক্ষ্মীপুর জেলার শিক্ষার হার ৬২%

 

আরো পড়ুন, দালাল বাজার খোয়া সাগর দীঘি click

আরো পড়ুন-মজু চৌধুরী হাট click

 

লক্ষ্মীপুর জেলার ঐতিহ্য-

লক্ষীপুর জেলায় অনেক বিখ্যাত স্থাপনা রয়েছে যেগুলো ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্য শৈলীর দিক থেকে অনেক উন্নত। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রামগতি একটি উপযুক্ত স্থান। রামগতি বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে মেঘনা নদী বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এখানকার নৈসর্গিক দৃশ্য খুবই মনোরম। এটি একটি প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। পর্যটকরা এখানে বসে ইলিশ ধরার রোমাঞ্চকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। রামগতি ভ্রমণের সময় পর্যটকরা সেখানকার মিষ্টি এবং মহিষের দুধে তৈরী ঐতিহ্যবাহী দই সংগ্রহ ও উপভোগ করতে পারে। এখানে কুয়াকাটার মত সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অবলোকন করা যায়। রঙ-বেরঙের পালতোলা নৌকার সারি পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। এ দৃশ্য তুলনাহীন।

বন বিভাগের বিশাল বনায়ন, কেয়াবনের সবুজ বেস্টনীও নজরে আসবে। যাতে সড়ক ও নৌপথে পর্যটকদের যাতায়াতে সুবিধা হয়। পর্যটন স্পটগুলো সরকারের সংরক্ষণ নীতিমালার আওতায় রাখা এবং এর উন্নয়ন প্রয়োজন। পর্যটকদের সুবিধার্থে আধুনিক হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট স্থাপন করা প্রয়োজন। আমত্মজেলা বাস টার্মিনাল পর্যমত্ম রামগতি-সোনাপুর রোড পাকা করা প্রয়োজন। লক্ষীপুরের  ঔতিহাসিক স্থান, মসজিদ ও মাজার রয়েছে, যেগুলো পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারে।লক্ষ্মীপুরের কাঞ্চনপুরে মহান সাধক হযরত মিরান শাহ (রঃ)-এর মাজার এবং দুইশত বছরের অধিক পুরাতন রামগঞ্জের শ্যামপুর দায়রা শরীফ ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় গুরত্বপূর্ণ স্থান । রামগতিতে অবস্থিত দায়রা শরীফও ধর্মানুরাগী মানুষকে আকর্ষণ করে। দালাল বাজারের কামানখোলা জমিদার বাড়ি একটি দর্শনীয় স্থান। দুই শত বছরের প্রাচীন রায়পুরের তিতাখাঁ জামে মসজিদ স্থানীয়ভাবে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত। একশত পনের বছরের প্রাচীন কাঞ্চনপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ এবং মান্দারী বাজার মসজিদ সৌন্দর্য্য ও স্থাপত্য শৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ।

 

আরো পড়ুন – নোয়াখালীর ইতিহাস -ঐতিহ্য -সংস্কৃতি – জানা অজানা

how do you feel about this website ?

%d bloggers like this: