Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Homeআন্তর্জাতিক

‘সিয়েরালিওনের প্রধান ভাষা যেভাবে বাংলা হল’

নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে বাংলা ভাষা কেবলই বাঙালি বা বাংলাদেশের মানুষেরই একমাত্র ভাষা নয়। বাংলাদেশের সীমানা থেকে বহু দূরে, অনেকের কাছেই অপরিচিত আফ্রিকার একটি দেশের প্রাধান অফিসিয়াল ভাষাও বাংলা। কি ভাবে এটা সম্ভব হল? সেই অবিশ্বাস্য ও অসম্ভবকে সম্ভব করার কথাই আজ বলব।

আমারা যদি মনে করি শুধুই বাংলাদেশি জনগণ এই বাংলা ভাষাতে কথা বলেন তাহলে ভুল হবে। বাংলাদেশ ছাড়াও আরো একটি স্বাধীন দেশের প্রধান/অফিসিয়াল ভাষা বাংলা। কোন সেই দেশ যে দেশের মানুষ বাংলা ভাষাকে নিজের ভাষা করে নিয়েছে আর কেনই বা নিয়েছে? দেশটির নাম সিয়েরালিওন।

সিয়েরালিওন পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। যার সাংবিধানিক নাম সিয়েরালিওন প্রজাতন্ত্র। ভূ-রাজনৈতিকভাবে সিয়েরালিওনের উত্তর সীমান্তে গিনি, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে লাইবেরিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে আটলান্টিক মহাসাগরের অবস্থান।

 

দেশটির বৃক্ষহীন তৃণভূমি অঞ্চল থেকে রেইনফরেস্ট অবধি বিচিত্র পরিবেবেশে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু বিরাজ করে। সিয়েরালিওনের মোট আয়তন ৭১ হাজার ৭৪০ বর্গকিলোমিটার এবং মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ মিলিয়ন ( ২০১১ জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে)। ছোট্ট এই দেশটির রাজধানীর নাম ফ্রিটাউন।

 

শহরটি দেশের বৃহত্তম এবং অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। বো সিয়েরালিওনেরর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এক লক্ষের বেশি জনসংখ্যাভূক্ত অন্যান্য শহরগুলো হল কেনেমা, ম্যাকেনি, কাইদু। সিয়েরালিওন উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল– চারটি ভৌগলিক অঞ্চলে বিভক্ত সেগুলো, আবার ১৪টি জেলায় বিভক্ত।

সিয়েরালিওন খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে হীরা এর অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। এছাড়াও রয়েছে অন্যতম পণ্য– টাইটাইটানিয়াম ও বক্সাইট, অন্যতম প্রধান পণ্য সোনা, এবং রয়েছে রুটাইল এর পৃথিবীর বৃহত্তম মজুদের একটি অংশ।

 

এত প্রাকতিক সম্পদ থাকার পরেও সিয়েরালিওনের ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। সিয়েরালিওন ১৯৬১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। সরকারের দুর্নীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার ফলে সিয়েরালিওনে গৃহযুদ্ধ হয় (১৯৯১-২০০২) যার জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চলে।

এ যুদ্ধে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়, দেশের অবকাঠামো প্রায় ধ্বংস করে, এবং দুই মিলিয়ন মানুষ প্রতিবেশি দেশগুলোতে শরণার্থী হিসাবে বাস্তুহারা হয়।

 

এই গৃহযুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞই একদিন শান্তিতে রূপ নিতে পারার পথ ধরেই দেশটির রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলায় পরিণত হয়। সিয়েরালিওনে প্রায় ১৬টি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে, যাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা ভাষা ও রীতিনীতি।

দুটি বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী হল তেমনে ও মেন্দে। তেমনে জাতিগোষ্ঠীকে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রাধান্য করতে দেখা যায়, যখন মেন্দেরা দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে তাদের কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। যদিও দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে সরকারি প্রশাসন ও বিদ্যালয়সমূহে ইংরেজীতে কথা বলা হয়, তবুও দেশে এবং দেশের সকল ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রিও ভাষা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কথ্য ভাষা।

বিশেষ করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য এবং এক অপরের সাথে সামাজিক যোগাযোগে ক্রিও ভাষা ব্যবহার করে। এছাড়া ২০০২ সালে তাৎকালীন সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

সিয়েরালিওন বাংলাকে সে দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ২০০২ সালে। এই স্বীকৃতি এই অর্জন হঠাৎ করে হয়নি। এটা হয়েছিলো সে দেশের গৃহযুদ্ধ থামাতে এবং গৃহযুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ।

সিয়েরালিওন পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। ১৯৯১ সালের পর থেকে সেখানে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। যুদ্ধ প্রকট হতে থাকলে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশ এবং আরো ১২ টি দেশ শান্তি মিশনে যোগ দেয়। ভয়ানক পরিস্থিতির কারণে অনেক দেশ সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।

বাংলাদেশ তখন সেখানে খুব অল্প সময়ের নোটিশে আরো সেনা পাঠায়। বাংলাদেশি সেনারা একাধারে গেরিলা নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করতে থাকে, সংঘাত ও দাঙ্গা দমন করতে থাকে, শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কর্মসূচি চালাতে থাকে এবং বিভক্ত জাতিগুলোর মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তাবোধ গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্বক ব্যবস্থা নেয়।

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশী সেনারা ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও ব্যবহার করতে থাকে, স্থানীয় লোকজনকে শেখাতে শুরু করে।

বাংলাদেশি সেনাদের আন্তরিকতায় সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করে আগ্রহের সঙ্গে। বাংলা ভাষার সাথে সাথে তারা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচিত হতে থাকে। একসময় দেখা গেলো স্থানীয়রা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাঙালি নাচ ও গান পরিবেশন করছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সিয়েরালিওন সরকার বাংলা ভাষাকে সে দেশের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কাবাবা বাংলাদেশ সেনাদলের নির্মিত একটি ৫৪ কিলোমিটার সড়ক উদ্বোধন কালে এই ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বাদে মানে এশিয়ার ভূমিসীমার বাইরে এই প্রথম কোন দেশে বাংলা ভাষা সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেল।

সেনাবাহিনীর অবদান কেবল সামরিক ক্ষেত্রে নয় বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যা আমাদের দেশের জন্য অনন্য।

সুত্র ; defence bangla

২০১৬ সালে বাংলা ও আফ্রিকান ভাষায় সিয়েরা লিওনের শিল্পীরা গেয়েছেন প্রভাতফেরির গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। সিয়েরা লিওনের শিল্পীদের গাওয়া গানটি নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একটি নতুন বিজ্ঞাপনচিত্র।
ভিডিওটি দেখুনঃ

https://www.youtube.com/watch?v=OPzUB64CpU0

Related Articles

how do you feel about this website ?

Back to top button
%d bloggers like this: