‘সোনার বাংলা সার্কাস’ ব্যান্ডটি ২০১৮ সালের মে মাসে তৈরি হয় । সোনার বাংলা সার্কাস ব্যান্ডটি গঠনের প্রায় দেড় বছর পর নয়টি (হায়েনা এক্সপ্রেস,মৃত্যু উৎপাদন কারখানা,অন্ধদেয়াল,সূর্যের অন্ধকার,আমার নাম অসুখ, ক্রমশ,পারফিউমের ফেলে দেয়া বোতল, আত্মহত্যার গান,এপিটাফ) গান নিয়ে ‘হায়েনা এক্সপ্রেস’ নামে প্রথম অ্যালবাম বের করে ব্যান্ডটি।
ব্যান্ডের ভোকাল প্রবর রিপন বলেন,গানগুলোর মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতার আত্মহত্যার গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সোনার বাংলা সার্কাস সবগুলো গানের লিরিক্স-
1- Hyena Express / হায়েনা এক্সপ্রেস:
গভীর রাতের সরণি
ছুটেছে নরক নগরী
হায়েনা গাড়ীতে তুমি
উড়ছে চুল অগ্নিকেশী
ডিজেলের ভুলে রক্তে চলে গাড়ী
ইঞ্জিনে বিষাদ মহাপৃথিবীর
পেছন ছিটে ইবলিশ খায় পনির
থেতলে বাতাস হলো বরফের নীড়
হিরোশিমা নাগাসাকি এ নাভী ও নাভী
ধোঁয়ার মুখোশে উজ্জ্বল কত বীর!
পিচের নীচে কারা চিৎকার করে ?
ঘাতক চাকা ছোটে মনন্ত্বরের ভোরে
সূর্যের ধাওয়ায় ফিরেছে অন্যস্বরে
শৃগাল গায় নরক চিড়িয়াখানার বাহুডোরে
ট্রুম্যানের হাড়ে বাঁজে হিটলার, চার্চিল বাঁজে যার পাঁজরে
এত রক্ত মদির ড্রাইভার সারি সারি
শকুনের শ্যেন চোখে ধায় অনন্তরাত্রি
দুপাশে নেকড়ের বন গাছেরা ব্যাণ্ডেজ মোড়ানো যাত্রী
ক্যারাভান মর্গে অনন্ত প্রসবে কাতর মানুষের জন্মদাত্রী
রক্তের তোড়ে সূর্যের দিকে মর্গের দরজা খুলে দেয় নরকধাত্রী
2- Mrittu Utpadon Karkhana/মৃত্যু উৎপাদন কারখানা:
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি
কথায়,ইচ্ছায়,সাধনায় আর কারখানায়
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি
মহামারী শিশুদের প্রিয় খেলনা
যুবকরা ভালোবাসে মরে বেঁচে থাকতে,
অকাল মৃত্যু প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের প্রিয় উপহার
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি
সেই বুলেটটা কোথায় ?
যার গায়ে আমাদের মৃত্যুর নাম লিখে রাখা
তার জন্য পাঁজরের ভেতর পেতে রেখেছি সিংহাসন
আর তাই ধুয়েমুছে ফুঁ দিয়ে দিন কাটাই,
জীবনকে সময়ের ছুটকা ছাটকা পরিহাস জেনে
বহুপুরুষ ধরে আমরা পেশায় কসাই,
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি ।
মৃত সৈনিকের ফসিল দিয়ে গড়েছি ঘরের দেয়াল
রক্তের সেচে ফসল ফলে ফসল ফলে দেদার
সুর্যকে দেখে মনে হয়
ফেরেশতাদের তাক করে রাখা কামানের গোলা
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি
প্রতিটি মৃত্যুর সাথে
প্রতিটি লাশের সাথে
বিনামূল্যে দিয়েছি একটি করে গোলাপ
পরিহাসের বিষয় হলো
সেই গোলাপের রঙটিও লাল !
তোমার শিশুর হাসির মত লাল !
তোমার প্রেমিকার কপালের টিপের মত লাল !
শরীরে বয়ে চলা রক্তের মত লাল !
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি
ধ্বংস যেহেতু মানব চেতনার সেরা ফসল
তাই নিজের মেরুদণ্ড হাতে দাঁড়িয়েছি
নিজের মাংসপিণ্ডের সামনে
আমরা মৃত্যু উৎপাদন করি
video
3- Ondho Deyal / অন্ধদেয়াল:
দেয়ালের ছায়ায় দেখো
বাড়ছে দেয়াল একা
নিজের দেহ রেখে
ছায়াতেই লেপ্টে থাকা
সূর্যের ব্যারাম দেখে
বাড়ে মানুষের মাথা ব্যথা
ব্যথার আন্দোলনে
মরে মগজের গোপন পোকা
ভাঙ্গতে তোমার ব্যথা
হলাম জীবনের সখা
প্রেমের বিরাট দামে
শুধু মৃত্যুকে কিনে আনা
দেয়ালের নীরব গায়ে
কিছু লেখা নেই ‘তুমি’ ছাড়া
দেয়ালের গোপন ঘরেই
মুক্তিই বন্দীদশা
আমার এই গানে
মুক্তির কোনো পথ খোলা নেই
হতেও পারে এই গানের বাইরেও
কোথাও তোমার দেশ
ক্রূশ থেকে নেমে যীশুর
আজ হলো একটু হুশ
দেয়ালে নতুন সময় মানে
বুনোষাড়ের ঢুশ
4- Shurjer Ondhokar / সূর্যের অন্ধকার:
আমাকে ছেড়ে তুমি যেখানে যাবে
সেখানে সূর্য অন্ধ
আমাকে ছেড়ে তুমি যেখানে যাবে
সেখানে সময় বন্ধ
আমাকে ছেড়ে তুমি যেখানে যাবে
সেখানটা চোরাবালি
তোমার শরীর গিলে নেবে
তোমাকেই গিলে নেবে
শোনো
কোনো এক অদৃশ্য কারণে
পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে সব
রেলপথ, জলপথ, আকাশপথ
রেলপথ, জলপথ,স্থলপথ
বলো কোন পথে তুমি যাবে
শোনো
আমি এক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট
যেখানে যাও আমার রাডার
তোমাকেই খুঁজে নেবে
শোনো
তোমার সামনে খোলা আছে একটিমাত্র পথ
সে পথটা হলাম আমি, সে পথটা হলাম আমি
সে পথ দিয়ে তুমি ফিরতে পারো আমার ঘরে
যেখানে সারাদিন সারারাত সূর্য জ্বলে থাকে
যেখানে সারাদিন সারারাত সূর্য জ্বলে থাকে
5- Amar Naam Oshukh / আমার নাম অসুখ:
আমার নাম অসুখ
যে গ্রাম থেকে আমি এসেছি
সেখানের বুড়ো চাষারা
তাকে আদর করে ডাকে বেহেস্তের খামার নামে।
সূর্যের অসময়ের ছেলে আমার বাবা
মাকে ডাকতো পরাণ পাখি নামে,
তারা যেখানে আমাকে পাঠিয়েছে
সেখানের সুন্দরীরা তাকে হেসে হেসে ডাকে
“হাইই হ্যাণ্ডসাম দোযখের বাগান ।”
পৃথিবীর সব ভালবাসার গল্প
যদি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়
কোন নির্জন পরিত্যক্ত গুহা
আমাকে কি ডেকে নেবে না
যেখান থেকে ছড়াবে না
আমাদের ছোয়াচে রোগশোক?
আমার নাম অসুখ
যেখানে আমি এসেছি
এসে দেখছি পুড়ছে হাজার হাজার বেহালা
তাদের কাছে জানতে চাইলাম
কোথায় তোমার গান?
বেহালা বললো “আমি যে পুড়ছি এটাই আমার গান”
আগুন বললো “আমি পোড়াচ্ছি এটাই আমার গান।”
আমার নাম অসুখ
তাই সেই মরা তেজী ঘোড়া খুঁজতে বেরোলাম পথে
কিছুদুর গিয়ে দেখি এক ঈশ্বর কেনাবেচার হাট
নানা আকারের, নানা ধরনের, নানা রকমের ঈশ্বর !!
কোনোটা কিনতে হলে দিয়ে দিতে হবে আমার চোখ
কোনোটা কিনতে হলে দিয়ে দিতে হবে আমার মগজ
আর সবচেয়ে সুন্দর ঈশ্বর কিনতে হলে
দিয়ে দিতে হবে আমার নিজেকেই;
আমার নাম অসুখ
তাই পালালাম বিশ্বাষী,অবিশ্বাষী দুজনের হাট থেকে
আমার নাম অসুখ
আরো পড়ুন – লক্ষ্মীপুর জেলার জানা অজানা তথ্য ও বিভিন্ন প্রশ্নের [?] উত্তর click
6- Kromosho/ক্রমশ:
আকাশে চোখের পলকের চেয়েও
দ্রুতগতির নভোযানে
আমি তোমার কাছে
যেতে যেতে টের পাচ্ছি
আমি আসলে তোমার থেকে
অনেক দূরে সরে যাচ্ছি
ক্রমশ
একটা ইস্পাতের মুখোশের নিচে
হারিয়ে যাচ্ছে তোমার মাংসল মুখ
ইট বালির সুড়কির পোশাকের নিচে
শুকিয়ে যাচ্ছে তোমার সবুজ দেহ
ক্রমশ
আমি ভাবছি আর দেখছি
আর টের পাচ্ছি
তুমিও আমার মত ভাবছো
আর দেখছো আর টের পাচ্ছো
আমি আসলে তোমার থেকে
অনেক দূরে সরে যাচ্ছি
ক্রমশ
একটা ইস্পাতের মুখোশের নিচে
হারিয়ে যাচ্ছে তোমার মাংসল মুখ
ইট বালি সুড়কির পোশাকের নিচে
শুকিয়ে যাচ্ছে তোমার সবুজ দেহ
ক্রমশ
7- Perfumer Fele Deya Botol/পারফিউমের ফেলে দেয়া বোতল:
কোন সুদূরের বন্দর থেকে
তোমার ঘ্রাণ ভেসে আসে
গরাদের ভেতর আমি হাসফাস করি
বিরাট পাখির ডানার নিচ থেকে
চাপাপড়া আমাকে উদ্ধার করি
আমি বারবার মরি বারবার লড়ি
মৃত্যুর কাছে যাবার দূরত্বের সাথে।
পারফিউমের ফেলে দেয়া বোতলে
নতুন পৃথিবীর গন্ধ ডাকছে তোমাকে
তুমি যাচ্ছো চলে এই বন্দর ছেড়ে
কোনো সুদূরের দ্বীপের দিকে
কামুক পোতাশ্রয় তোমাকে দেবে আশ্রয়
অন্ধ বাতিঘর বিষন্ন সৈকত!
পারফিউমের ফেলে দেয়া বোতলে
নতুন পৃথিবীর গন্ধ ডাকছে তোমাকে
8- Attohottar Gaan / আত্মহত্যার গান:
পাহাড়ের চূড়ো থেকে পাথর
গড়িয়ে পড়ছে তোমার পায়ে
যেন সূর্যের হৃদয় চুরি করে
কে যেন ছড়িয়ে দিয়েছে গা’য়ে
পাথর ঘষে ঘষে যে আগুন জ্বেলেছিলে
তারই শিখায় পুড়ছো তুমি নিজেই
এমনকি যে বৃষ্টির অপেক্ষায় বেঁচে আছো
আগুনের আঁচে সেই মেঘ বাষ্প হয়ে
মিলিয়ে গেছে হৃদয়শূন্য নভোনীলে
মহাশূন্য তোমার চোখের কোটর
তুমিই পৃথিবীর কবর
মানুষ হতে যাকে খুন করেছিলে সেই বর্বর
তার অভিশাপে তুমি ঢেউছাড়া মহাসাগর
নভোযানে চেপে চলেছো ধীরে ধীরে
খুলেছো মহাশূন্যের দরজা
ওপাশে মরা ঈগল পোড়া আকাশ তার নখরে
তার শিশুর চোখে আগুনে পুড়ছে মহাকাল
সেই মহাকালে তুমি ছিলে
নিজেকে বারবার পিছে ফেলে
যুদ্ধ্ববিধ্বস্ত শহরের মত তোমার হৃদয়
হৃদয় ঘষে ঘষে পোড়াও সেই শহরের স্মৃতিরেখাও
9- Epitaph/ এপিটাফ:
এই আলো ধরে রাখো কুঠুরী
আমাকে আর খুঁজো না
আমি থাকবো নিভে যাওয়া প্রদীপের আঁধারে
এই গান শুনে রাখো বালুতীর
আমাকে আর ডেকো না
আমি চলে যাবো চিলের ডানায়
গভীর সাগরে
মানুষের হৃদয় ভরে ওঠে
আবার শূন্য হওয়ার জন্য
বিস্মৃতির এই ফুলেল বাগানে
ঝরাফুলে মধু খুঁজে ভ্রমর হয় ধন্য
আমাদের হয়েছিলো দেখা
যখন হৃদয়কে শাসন করছিলো শূন্যতা
আমাদের হয়েছিলো কথা
যখন মৃতের কঙ্কালে স্তব্ধ মহাকাল
মানুষের হৃদয় ভরে ওঠে
আবার শূন্য হওয়ার জন্য
বিস্মৃতির এই ফুলেল বাগানে
ঝরাফুলে মধু খুঁজে ভ্রমর হয় ধন্য
কোনো সন্ধ্যায় ভুলে যেও সেই আলো
যখন সময় ডেকে নেবে অন্য প্রদীপের ধারে
নিজের অরণ্যে সময় চালায় তার ধারালো কুঠার
ভুলে যেও সেই গান সাগর ধুয়ে দেয়
যদি তোমার পুরোনো সৈকত
মানুষের হৃদয় ভরে ওঠে
আবার শূন্য হওয়ার জন্য
বিস্মৃতির এই ফুলেল বাগানে
ঝরাফুলে মধু খুঁজে ভ্রমর হয় ধন্য