ডালিম কুমার দাস টিটু ঃ আগামী ২৬ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিঃ নির্বাচন ২০২২ অনুষ্ঠিত হবে । নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে কোন প্রতিদন্ধী না থাকায় ইবনে জিসান নাহিয়ান বিনা প্রতিদন্ধীতায় নির্বাচিত হলেও সভাপতি পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে স্থানীয়সূত্রে জানাযায়। এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদন্ধিতা করছেন দুইবারের সফল সহ-সভাপতি, সাংষ্কৃাতক ব্যাক্তিত্ব ,সমবায়দের আস্থার প্রিয় মানুষ মামুনুর রশিদ মামুন এবং সাবেক সভাপতি রফিক আহমেদ । এছাড়াও ৫ টি ব্লকের ৫ জন সদস্যের মধ্যে ৪ জন সদস্য বিনাপ্রতিদন্ধীতায় নির্বাচত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে তবে একটি ব্লকে নির্বাচনের মাধ্যমে একজন সদস্য নির্বাচিত হবেন ।
নিতীমালা অনুযায়ী ৩ বছর পরপর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । সদর উপজেলায় বর্তমানে ৩২৬ টি সমিতির মধ্যে ৩২৬ জন ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন । তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি এবং সদস্য নির্বাচিত হবে। তবে এবারের নির্বাচনে অতিতে যারা সমবায়দের পাশে ছিলেন , তাদের কল্যানে কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও যারা সমবায়দের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন ,সুখে দুঃখে তাদের খোঁজ খবর নিবেন তাকেই সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করবেন । মামুনুর রশিদ চেয়ার মার্কা এবং রফিক আহমেদ আনারশ মার্কা নিয়ে লড়বেন।
সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবেন প্রশাসন তথ্যসূত্রে এমনটাই আবাস পাওয়া গেছে। প্রার্থী এবং ভোটাররাও চায় সুষ্ঠ পরিবেশের মধ্য দিয়ে যিনি নির্বাচিত হয়ে আসেন তার গলায় বিজয়ের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে নিবেন । এরিমধ্যে সভাপতি পদে চেয়ার মার্কার প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুন একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছেন । ইশতেহারে তিনি বলেছেন ,স্থবির হওয়া প্রাথমিক সমিতিগুলো সবল করবেন , প্রতিষ্ঠান থেকে সকল প্রকার দূর্নিতী বন্ধ করবেন ,সমবায়িদের নামে দায়ের করা সার্টিফিকেট মামলা সমূহ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি এবং ভবিষ্যতে আর কোন মামলা না করার প্রতিশ্রুতি দেন ,কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির বেহাত হওয়া সম্পদগুলো উদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন,গচ্ছিত শেয়ার সঞ্চয়ের সুদের হার বৃদ্ধি করবেন ,কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিঃ এর স্থায়ী সম্পদসমূহ রক্ষা করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করবেন ,সাব সেন্টার গুলো আধুনিকায়ন করে ইউসিসি লিঃ এর আয় বৃদ্ধি করা ,বাসাবাড়ি মেরামত করে আয় বৃদ্ধি করা এবং সমবায়িদের মৃত্যুকালীন ভাতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন।
অন্যদিকে আরেক সভাপতি প্রার্থী রফিক আহমেদের কোন ইশতেহার হাতে না পাওয়া গেলেও তিনিও ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন । উল্লেখ করা যায় যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সনে ষাটের দশকের শুরুতে প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খাঁন কর্তৃক প্রবর্তিত ‘কুমিল্লা মডেল’ বা ‘‘দ্বি-স্ত সমবায় ব্যবস্থার’’ সফলতা দৃষ্টে কর্মসূচিটি দেশব্যাপি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি (আইআরডিপি) গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড গঠনের পর থেকে কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতিসমুহ ও গ্রামভিত্তিক প্রাথমিক সমিতিসমুহের বিকাশ ও উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।। এ কর্মসূচির মাধ্যমে পল্লী এলাকার জনগণকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নের লক্ষ্যে বহুমাত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহন যেমন, অধিক খাদ্য উৎপাদন, আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সম্প্রসারণ, উন্নত কৃষি ব্যবস্থাপনা, কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পল্লী অঞ্চলের কর্মসংস্থান সৃজন কল্পে কাজ শুরু করেন ।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের দারিদ্রতা রোধ কল্পে বাংলাদেশে এ কর্মসূচিতে গ্রামীণ সংগঠন সৃষ্টি, নেতৃত্বের বিকাশ, কৃষির আধুনিকায়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং নিজস্ব সঞ্চয় জমার মাধ্যমে পুঁজি গঠন করে ক্ষুদ্র ঋণের ভিত্তি রচনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে যার একমাত্র অবদান জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে আইআরডিপি’র সাফল্যকে ভিত্তি করে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় ১৯৮২ সনে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি (আইআরডিপি) বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)-এ রুপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ ১৯৮২ মহামান্য আপিল বিভাগ কর্তৃক বাতিল হওয়ায় গত ৭মার্চ ২০১৮ তারিখ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৮ নূতন করে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
নির্বাচনের বিষয়ে সভাপতি প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুনের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি দৈনিক নতুন দিনকে বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আমি দুইবারের সহ- সভাপতি ছিলাম । আমি সবসময় সমবায়দের পাশে থেকে ওদের সহযোগিতা করে আসছি । করোনা কালীন সময়ে আমি আমার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে সমবায়দের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী , আর্থিক সহযোগিতা করেছি । আশা করি আমি নির্বাচিত হলে আমি আমার ইশতেহার অনুযায়ী কাজ করবো । আমি প্রশাসনের কাছে একটি দাবি রাখবো যাতে ২৬ ডিসেম্বর প্রত্যেক ভোটার সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে । সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচনে যিনিই সভাপতি নির্বাচিত হন আমি মাথা পেতে মেনে নেব।
আরেক সভাপতি প্রার্থী রফিক আহমেদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুষ্ঠ পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব কিছু দেখ ভালো করছেন । ওনার নেতৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । এছাড়াও নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ২ জন ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ১ জন এসিল্যান্ড উপস্থিত থাকবেন । তিনি বলেন ভোটার তালিকা এবং ব্যালট পেপার সহ সবকিছু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রনে আছে । তবে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি এই প্রার্থী বলেন, ইনশাল্লাহ বিজয়ের বেপারে আমি শতভাগ প্রত্যাশী আমি বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো।
পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা হিমেংশু বনিক জানান, আমি আমার দায়িত্বের জায়গা থেকে নির্বাচন সুন্দর করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো । তিনি আরো বলেন, ভোটের দিন ভোটার ছাড়া অপিরিচিত কোন ব্যাক্তি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেনা। ২৬ ডিসেম্বর সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিয়ে নির্বাচিত সভাপতির নেতৃত্বে নব গঠিত কমিটি সমবায়দের কল্যানে কাজ করবেন এবং গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন শংশ্লিষ্টরা ।